পুলিশের জেরায় ধানমন্ডির জোড়া খুনের মামলায় গ্রেফতার গৃহকর্মী সুরভী আক্তার নাহিদা বলেছেন, বাসা থেকে আমাকে বের হতে না দেওয়ায় আমি একাই দুজনকে খুন করেছি। আর কেউ আমার সঙ্গে ছিল না। পুলিশ তার এই বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছে না। তাদের সন্দেহ খুনের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে। এসব তথ্য বের করতেই সুরভীকে আদালতে পাঠিয়ে গতকাল রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে আলোচিত এই জোড়া খুনের মামলাটি থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের ওপর ন্যস্ত করা হয়। শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির রোড-২৮, বাড়ি-২১ এর পঞ্চম তলা থেকে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান টিমটেক্স গ্রুপের এমডি ও ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ডিএমডি কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী দিতির (১৮) রক্তাক্ত লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের দুজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে এ ঘটনায় নিহত আফরোজার মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, হত্যাকান্ডে র পাঁচ দিন আগে তারিমের পিএস বাচ্চুর সঙ্গে সুরভীর পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। এরই সূত্র ধরে রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সুরভীর সন্ধান পাওয়া যায়। সুরভীর মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় বাচ্চুর মোবাইল থেকে। এরপর ওই নম্বরের সূত্র ধরে ভোলা সদরে তার পরিবারের সন্ধান মেলে। শনিবার পুলিশ ভোলায় গিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করে। স্বজনদের দিয়ে যোগাযোগ করানো হয় সুরভীর সঙ্গে। পরে পুলিশ আগারগাঁও বস্তিতে তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করে। এদিকে, বাচ্চু প্রথম থেকে অনেক তথ্য গোপন করেছেন। তিনি বলেছিলেন, সুরভীকে তিনি সেভাবে চিনতেন না। অথচ ঘটনার আগে অন্তত অর্ধশতবার তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। ডিবির ধানমন্ডি জোনের এসি আহসান খান জানান, সুরভী তার বড় বোনের সঙ্গে আগারগাঁওয়ে থাকতেন। শ্যামলীর একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। গত ১৫ অক্টোবর চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর গৃহকর্মীর কাজ নিতে ধানমন্ডির ওই বাসায় যান। সেখানে নিরাপত্তাকর্মী নুরুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে নুরুজ্জামানের মাধ্যমে সুরভীর সঙ্গে পরিচয় হয় বাচ্চুর। বাচ্চু সুরভীকে আফরোজা বেগমের বাসায় শুক্রবার কাজ দেন। ওই দিনই আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর সুরভী ওই বাসা থেকে পালিয়ে তার বড় বোনের আগারগাঁওয়ের বাসায় চলে যান। সেখানে গিয়ে রক্তমাখা কাপড় পরিবর্তন করে মিরপুর শাহ আলী মাজারে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সর্বশেষ রবিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুরভী একাই খুন করেছেন বলে জানিয়েছেন। সুরভীর বক্তব্য শুনে তার ‘মানসিক ভারসাম্য নিয়ে সন্দেহ’ তৈরি হয়েছে। তবে জোড়া খুনের এ ঘটনার সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্ট রয়েছে কিনা তা জানতে আজ তার রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। কেন কি কারণে এ হত্যা তার সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের ধানমন্ডি জোনের এডিসি আবদুল্লাহিল কাফী জানান, সুরভী বলেছেন, ওই বাসা থেকে একটা আইফোন তিনি নিয়েছিলেন।
৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই টাকার বেশির ভাগই খরচ করে ফেলেছেন।
ঘটনার পর পুলিশ ওই বাড়ির সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে সন্দেহভাজন সেই গৃহকর্মীকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হাতলভাঙা ছুরি পাওয়া যায় ঘরের ভিতরে। আর বাসা থেকে একটু দূরে পাওয়া যায় একজোড়া রক্তমাখা জুতা, যা সেই গৃহকর্মীর বলে সন্দেহ করছিল পুলিশ। সেই সন্দেহভাজন গৃহকর্মী সুরভী বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেন।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুরভী পুলিশকে জানিয়েছেন, বাচ্চু কুপ্রস্তাব দেওয়ায় বাসা থেকে বের হতে চায় সুরভী। যাওয়ার সময় গৃহকর্মী দিতি বাধা দেন। তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন সুরভী রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে দিতির গলা, পিঠে আর বুকে আঘাত করেন। এরপর সুরভী আরেক ঘরে গিয়ে আফরোজা বেগমকে বলেন, সে বাসা থেকে চলে যাচ্ছে। আফরোজা তখন জানতে চান, অন্য ঘরে দিতি চিৎকার করল কেন।
সুরভী তখন বলেন, সে যেতে চাওয়ায় ঝগড়া হয়েছে। আফরোজাও তখন বলেন, তোকে তো বাচ্চু যেতে না করেছে, তুই এখন যেতে পারবি না। এ সময় সুরভী একই কায়দায় আফরোজাকে ঘাড়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। সুরভী বলেছেন, তিনি যখন বেরিয়ে আসেন, আফরোজা তখনো মারা যাননি, তখনো তিনি বিছানায় ছটফট করতে ছিলেন। এরপর হয়তো তিনি মারা যান।