শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় সাগরপথ এখন শান্ত। ফলে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সমুদ্রপথে মানব পাচার চক্র। ‘টেকনাফ টু মালয়েশিয়া’য় পাচার ও প্রতারণার শিকারে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও অসচেতন মানুষ। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে কখনো স্বেচ্ছায় আবার কখনো উন্নত জীবনযাপনের লোভে পড়ে প্রলুব্ধ হয়ে পাচার হচ্ছে সাগরপথে। টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকরা কোনো কোনো সময় পৌঁছেও যাচ্ছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশে। আবার প্রতারণার শিকার হয়ে পাচারকারীদের হাতে জীবনও দিতে হচ্ছে এসব ভাগ্যান্বেষী নিরীহ মানুষকে। বিদেশে পৌঁছে দেওয়ার নামে সংঘবদ্ধ দালালরা টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে ট্রলারে করে সাগরের মাঝপথে দু-এক রাত ঘুরিয়ে নামিয়ে দিচ্ছে দেশের ভিতরের কোনো দ্বীপে। আবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ইতিপূর্বে অনেকের হয়েছে সলিলসমাধি। এর পরও থামছে না সমুদ্রপথে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার নামে মানব পাচার। বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে, মানব পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। আর এ কারণেই পাচারের অপতৎপরতা ও বিভিন্ন ঘটনা ধরা পড়ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা-ঢল শুরু হলে ওই বছরের শেষ দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সমুদ্রপথে ভিনদেশে পাড়ি দিতে প্রস্তুতি নেয়। জীবন বাজি রেখে পাচারকারীদের সহায়তায় গভীর সমুদ্রপথে একসময় তারা পাড়ি দেয় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। পরবর্তী সময়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত ফিশিং ট্রলারে উঠে এদের কেউ পৌঁছেছে মালয়েশিয়ায়, কেউ থাইল্যান্ড, আবার কেউ শ্রীলঙ্কায়। পথে দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে ট্রলার বা নৌকাডুবিতে প্রাণ গেছে অনেকের। এ ঘটনার পর সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সে সময় মানব পাচার কিছুটা কমে আসে। তখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পিছিয়ে থাকা অনেক যুবককে টার্গেট করে দালাল চক্র। এদের অনেককে পাচারের আগেই টেকনাফ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে মানব পাচার।
তৎপর রয়েছে পাচারকারী দলের সদস্যরা। এরই মধ্যে পাচার হওয়ার পথে অনেকে ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে নারীর সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার চুক্তিতে ৪১ জন রোহিঙ্গাকে ট্রলারে তোলে দালাল চক্র। ট্রলারে করে সারা রাত সাগরে ঘুরিয়ে মালয়েশিয়ার সমুদ্রতীর বলে রাতের আঁধারে তাদের মহেশখালীর সোনাদিয়ার মগচরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মালয়েশিয়ায় এসে পড়েছে বলে তাদের নামিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় ট্রলারের মাঝি ও দালাল চক্র। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর উদ্ধার রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে জানান, সোনাদিয়ার মগচরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষের তৈরি করা অনেক বাসা রয়েছে। সেখানে রাতে বাতি জ্বলছিল। দূর থেকে এসব বাতি ঝলমল করতে দেখা যাচ্ছিল। আর সেই বাতি দেখিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বোঝায় এটাই মালয়েশিয়া।