উৎপাদন শুরু করেছে দেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধুনিক পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গতকাল বেলা ১১টায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে সংযুক্ত করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রটি ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আশা করা হচ্ছে আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট নির্ধারিত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পুরো লোড বহনে সক্ষম হবে। আর বাণিজ্যিকভাবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাবে আসছে পয়লা ফেব্রুয়ারি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাত ও দেশের মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেগাপ্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করে জাতিকে উপহার দেবেন বলেও তারা আশাবাদী।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিভিন্ন লোডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত করা হবে। প্রথমদিন (গতকাল সন্ধ্যা) পর্যন্ত ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি পাবে। আর আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এটি পুরোপুরি লোড নিতে প্রস্তুত হবে এবং আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আপাতত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো হবে। আর এটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে দেশের তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষ আরও জানান, এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযুক্ত করা হবে। আর তার পরের মাসে অর্থাৎ মে মাসেই এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। কেন্দ্রটি তৈরিতে ঋণ সহায়তা করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। কেন্দ্রটি নির্মাণে এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসি যৌথভাবে বিসিপিসিএল গঠন করে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পৃথিবীতে এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ সাধারণত আট থেকে দশ বছরের আগে শেষ হওয়ার নজির নেই। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এর নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশিদের এ ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিচালনা করার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কেন্দ্রটি পরিচালনা জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তারা পাঁচ বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনার পাশাপাশি প্রকল্পের জনবলও প্রশিক্ষণ দেবে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে।