সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রিজার্ভ চুরির তদন্ত থেকে দায়মুক্তি চায় সুইফট

গ্রেফতার আশঙ্কায় বাংলাদেশে আসতে ভয় কর্মকর্তাদের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রিজার্ভ চুরির তদন্ত থেকে ‘দায়মুক্তি’ চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেনে গোপন নিরাপত্তা কোড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সুইফট’। এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ‘সন্দেহজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ওই হ্যাকিং কেলেঙ্কারির পর বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য ছিল, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেমে প্রবেশ করেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেড ব্যাংকে রক্ষিত ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নিয়ে যায়।  ব্রাসেলসভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে মেইল পাঠিয়ে বলা হয়েছে, তারা রিজার্ভ চুরির কারণে ঝুঁকির মুখে পড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম পুনর্গঠন করতে চায়। এ জন্য তাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে আসবেন। তবে তাদের আশঙ্কা, বাংলাদেশে সুইফট কর্মকর্তারা এলে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ বা আটক করা হবে। এ ধরনের আশঙ্কা থেকে সংস্থাটি আগেভাগেই সরকারের কাছে ‘নিশ্চয়তা’ চাইছে, যাতে করে কোনো সুইফটের কর্মকর্তাকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা না হয়। অবশ্য এ ধরনের মেইল পাওয়ার পরও সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিরাপত্তার কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সুইফট সিস্টেম পুনর্গঠন জরুরি। এটি করতেই হবে। তবে সিআইডি যে তদন্ত করছে, সেটিতে তারা সুইফটের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে কিনা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না। এটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনার সময় সুইফটে যেসব কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, তারা যদি না আসেন তবে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদের কোনো কারণ নেই বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নতুন লোক পাঠালে তারা এ বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। কারণ তারা ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত নন। ফলে সুইফট যদি নতুন কর্মকর্তা পাঠান তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কোনো কারণ আছে বলেও আমরা মনে করি না।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পাঠানো মেইলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই রিজার্ভ চুরির ঘটনাটিকে ‘সাইবার ইনসিডেন্ট’ বলে অভিহিত করেছে সুইফট। ওই ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশে যে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিআইডি, তাতে অবশ্য সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি এ বিষয়ে সিআইডির সঙ্গে একটি বৈঠকের বিষয়েও অনুরোধ জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, সিআইডির সঙ্গে বৈঠকের এ বিষয়টি নতুন। এর আগে তারা যখন বৈঠক করতে বাংলাদেশে এসেছিল তখন এ ধরনের কোনো দাবি বা সুপারিশ ছিল না সুইফটের। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরে একই বিষয় নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন সুইফট কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে সুইফটের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার অ্যালেইন রায়েজ জানান, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেমকে আরও উন্নত করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে তাদের আলোচনাও হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনে ব্যবহৃত সুইফট কোড আরও কার্যকরী ও নিরাপদ করে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে আসবেন। তবে তার আগে তারা নিশ্চয়তা চান যে, তাদের কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। সূত্রগুলো জানায়, সুইফট কর্মকর্তা অ্যালেইনের বক্তব্যের জবাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন সেটি ছিল এরকম, (১) রিজার্ভ চুরির বিষয়ে সিআইডি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা একটি স্বাধীন সংস্থা। (২) সুইফট সিস্টেম নতুন করে পুনর্গঠনের আগে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা কাঠামোটি মূল্যায়ন করে নেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন এবং (৩) তৃতীয় কোনো পক্ষ বা দেশের মাধ্যমে নিরাপত্তা সেবা না দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয়দের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়ে পরামর্শ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবের দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল বিকালে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমন কি মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সর্বশেষ খবর