গত কয়েক দিন আগের ঘটনা। কাপড় ব্যবসায়ী শাহজাহান। কাপড় কিনে বস্তায় ভরে তিনি রিকশায় দোকানে যাচ্ছিলেন। শাহজাহানপুর মোড়ে রিকশাটি পৌঁছলে রিকশাচালক প্যাডেলে পা চালানো বন্ধ করে দেয়। রিকশাটি তিনি রাস্তার পাশে দাঁড় করান। ব্যবসায়ী শাহজাহান এ সময় রিকশা থামানোর কারণ জানতে চান। রিকশাচালক তাকে বলেন, ‘স্যার, প্যাডেলে সমস্যা হইতেছে। পাথর দিয়া বাড়ি মারলে ঠিক হইয়া যাইবো। আপনে একটু রিকশা থেকে নামেন’। শাহজাহান রিকশা থেকে নেমে যান। রিকশাচালক রিকশাটি আরও একটু সামনের দিকে ঠেলে নিতে থাকে পাথরের অজুহাতে। পেছন পেছন হাঁটতে থাকে শাহজাহান। তার দৃষ্টি রিকশায়। হঠাৎ তিনি কাঁধে ধাক্কা খেলেন। দৃষ্টি ছুটে যায় রিকশা থেকে। তার সামনে দাঁড়ানো এক লোক, তাকে বলছে- কী ভাই কোথায় তাকিয়ে হাঁটছেন? আরেক লোক ইতিমধ্যে চলে এসেছেন। তিনি বলছেন, কী ব্যাপার ভাই, কী হলো এখানে। প্রথম লোকটি বলছে, দেখেন আমার বিস্কিটের প্যাকেট ফেলে দিয়েছে। শাহজাহান এ সময় রাস্তা থেকে প্যাকেটটি তুলে দিয়ে বলেন, ভাই মাফ করে দেন। আমি খেয়াল করিনি। এ কথা বলেই তিনি সামনে তার মালভর্তি রিকশার দিকে দৃষ্টি দেন। অনেক রিকশার ভিড়ে তার রিকশাটিকে তিনি চিনতে পারছেন না। অজানা আশঙ্কা করছেন তিনি। বুক কাঁপতে থাকে তার। দৌড়ে সামনের দিকে ছুটতে থাকেন। সামনের রিকশা, তার সামনের রিকশা, পাশের রিকশা-না, কোথাও মালভর্তি রিকশা দেখছেন না তিনি। মাত্র এক মিনিটেই কতদূর যাবে রিকশাটি। তাও মালের মালিককে না নিয়েই। তিনি আশপাশের রিকশাচালকদের জিজ্ঞাসা করেন, কেউ দেখেছেন কিনা মালভর্তি কোনো রিকশা। কিন্তু কারও কাছেই কোনো জবাব নেই। শাহজাহান যখন যানজটের রাস্তায় ছোটাছুটি করছিলেন, তখন পাশের একটি টং দোকানদার শাহজাহানকে বললেন, ‘ভাই, এভাবে খোঁজ করে পাবেন না। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন আপনি। আপনার মাল পাইবেন না। এতক্ষণে কই লইয়া গেছে, ঠিক আছে? কত দেখি এমন ঘটনা রাস্তায়।’ টং দোকানদারের কথায় যেন তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন। আরে তাই তো, তিনি তো প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমন ঘটনা তিনি আগেও শুনেছেন। কিন্তু তার নিজের বেলায় যখন ঘটছিল, তখন তা বেমালুম ভুলে গেছিলেন। আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টের কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ। বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুরে। ব্যক্তিগত কাজে আগারগাঁও আইডিবি ভবন থেকে একটি কম্পিউটার কেনেন। কাছাকাছি বাসা হওয়ায় কম্পিউটার নিয়ে তিনি রিকশা ভাড়া করেন। রিকশায় চড়ে তিনি বাসার উদ্দেশে রওনা হন। রিকশাটি আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস দিয়ে শ্যামলী শিশুমেলা হয়ে কলেজ গেটের দিকে যাচ্ছিল। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের গেটের সামনে পৌঁছা মাত্র রিকশার গতি কমে যায়। রিকশাচালক সাইড করেন রিকশা। তানভীর জানতে চান, কোনো সমস্যা হয়েছে কি না? রিকশাচালক তানভীরকে নামতে অনুরোধ করেন। তানভীর কম্পিউটার রিকশার পাদানিতে রেখে নেমে দাঁড়ান। রিকশাচালক রিকশার একটি চাকা ধরে পরীক্ষা করছেন। এ সময় তানভীরের পাশ দিয়েই ৪/৫ জন যুবক হেঁটে যাচ্ছিলেন। একজন তাকে ধাক্কা দেয়। এরপর তাকে পেয়ে বসে তার সহযোগীরাও। ওই সুযোগে রিকশাচালক লাপাত্তা। ভুক্তভোগী তানভীর বলেন, তিনি আর সেই কম্পিউটার খুঁজে পাননি। রিকশাচালক আর সেই যুবকরা একই চক্র। এমন ঘটনা নাকি ওইসব সড়কে প্রায়ই হচ্ছে। পল্টন থানা পুলিশ এমন প্রতারকচক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। ওসি জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই এমন প্রতারণা করে আসছে। রিকশাচালকের বেশে এরা যাত্রীদের মালামাল লুটে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ এমন ধাক্কা পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীসহ সারা দেশেই তৎপর। তবে যারা কম্পিউটার বা মালামাল রিকশায় করে গন্তব্যে নিয়ে যান, তাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ানোর প্রয়োজন পড়লে রিকশার সামনেই দাঁড়াতে হবে। এখন টহল পুলিশ থাকে সবখানে। তাদের সহযোগিতা অবশ্যই নিতে হবে।