রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে আশা সিঙ্গেল ডিজিট সুদ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান মহাসংকট কাটাতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখবে

মানিক মুনতাসির

বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে আশা সিঙ্গেল ডিজিট সুদ

বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা পরিস্থিতির  ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে থেমে গেছে দেশের অর্থনীতির চাকা। ব্যাংক ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের সিদ্ধান্ত বিপর্যস্ত এই অর্থনীতিতে নতুন করে গতির সঞ্চার করবে। ১ এপ্রিল থেকেই সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে কার্যকর করেছে বেশির ভাগ ব্যাংক। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের মহামারীতে বিশ্ব অর্থনীতি থমকে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর চেয়ে বড় কোনো বিপর্যয়ে পড়েনি বিশ্ব অর্থনীতি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ ও শিল্পোদ্যোক্তাদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত শতভাগ ব্যাংকে বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। এরপর বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের থাবা, যা মূলত অর্থনীতির সম্ভাবনাগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও এবং বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্বে অন্তত আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে বেকার হয়ে যাবে। এর মধ্যে অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বেকার হবে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। আমেরিকায় ইতিমধ্যে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে ব্যাপকভাবে। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হার করোনা পরবর্তী দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলবে। উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগের আস্থায় ফিরবেন। এতে করে চাকরির বাজার সংকুচিত হওয়াকে রোধ করবে এ সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াবে। একই সঙ্গে শিল্প খাতের উৎপাদন খরচও কমিয়ে আনবে। এতে পণ্যমূল্যও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জনজীবনসহ সার্বিক অর্থনীতিতে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে একমাত্র ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণে ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে ঋণ দেওয়া বন্ধ। তাই ব্যাংকগুলো পুরনো ঋণে নতুন সুদ কার্যকর করছে। তবে ব্যাংকগুলো কিছুটা উদ্বিগ্ন তারল্য নিয়ে। একদিকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে হারের সঙ্গে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকর করা হয়েছে, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হলে প্রয়োজনে নতুন করে বাজারে টাকা ছাড়া হবে, যা মুদ্রাবাজারে সরবরাহ ঠিক রাখবে। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন ও পুরনো সব ধরনের ঋণে সুদহার হবে ৯ শতাংশ এবং এর পরও  কেউ ঋণখেলাপি হলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করা যাবে। প্রায় সব ব্যাংকই পুরনো ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করেছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব সুদ হিসাবের সফটওয়্যারও হালনাগাদ করেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এটি আগেরই সিদ্ধান্ত। কার্যকর করা হয়েছে পয়লা এপ্রিল থেকে। এটি আরও আগে করতে পারলে ভালো হতো। আমি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এটি চেষ্টা করে আসছি। বাংলাদেশের মতো এত বেশি পরিমাণে সুদ আর কোনো দেশে নেই। আমাদের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি এবং জনগণের স্বার্থে এর খুব প্রয়োজন ছিল।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, যেসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে, এর মধ্যে উচ্চ সুদহার অন্যতম। গত বছরের অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধির ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ হয়েছে। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস গত বছরের এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। করোনাভাইরাসের সংকট কেটে গেলেই নতুন করে চাঙা হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। তখন ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর