বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও বিভিন্ন জেলা লকডাউন ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক রূপ নেওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলা, উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করছে স্থানীয় প্রশাসন। গত দুই দিনে অনেক জেলা ও উপজেলা লকডাউন করা হয়।

লকডাউনের কারণে ওই জেলা বা উপজেলা থেকে কেউ যেমন বের হতে পারবেন না, তেমনি কেউ ঢুকতেও পারবেন না। তবে জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসাসেবা, কৃষিপণ্য-খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ও সংগ্রহ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্ট যানবাহন ও কর্মী লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। সব ধরনের গণপরিবহন, জনসমাগম বন্ধ থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : জেলার সাতকানিয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। জেলার মোট ২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে আটজনই সাতকানিয়ার। তাই সাতকানিয়াকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিশেষ স্থান হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে প্রশাসন।

রাজশাহী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজশাহী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসক হামিদুল হক মঙ্গলবার সকালে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকেই জেলায় লকডাউন কার্যকর হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজশাহী চলে আসছেন। এরই মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে আসা দুই ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাই সিভিল সার্জনের সুপারিশ ও জেলার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সব সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য রাজশাহী জেলাকে লকডাউন করা হলো।

রংপুর : গতকাল রাত ১০টা থেকে রংপুর মহানগরসহ পুরো জেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, রংপুরের আশপাশের জেলাগুলোয় ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

শরীয়তপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় শরীয়তপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। গতকাল করোনাভাইরাস প্রতিরোধসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভা শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

নওগাঁ : করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ প্রতিরোধে নওগাঁ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদ গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১টি উপজেলাসহ গোটা জেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ লকডাউন থাকবে। এ ছাড়া লকডাউন চলাকালে নওগাঁ জেলা থেকে কেউ বাইরে যেতে কিংবা অন্য জেলা থেকে কেউ নওগাঁয় প্রবেশ করতে পারবে না। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ময়মনসিংহ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবিলায়?করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ময়মনসিংহ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হলো। এ জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সড়ক ও নৌপথে অন্য কোনো জেলা থেকে কেউ এ জেলায় প্রবেশ করতে বা এ জেলা থেকে অন্য কোনো জেলায় যেতে পারবে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত একজন নারী চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি যেখানে থাকতেন সেই দেবগ্রাম দক্ষিণ ও পূর্বপাড়া গ্রাম দুটি লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিজয়নগরের ওই চিকিৎসক বর্তমানে ময়মনসিংহে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। নমুনা সংগ্রহ করার পর তিনি সেখানে চলে যান। ওই নারী চিকিৎসক আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে বিজয়নগর গিয়ে দায়িত্ব পালন করতেন।

বাগেরহাট : জেলার চিতলমারী উপজেলার পাটাপাড়া গ্রামে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ গতকাল ওই এলাকায় গিয়ে আক্রান্তের বাড়িসহ আশপাশের ১৬টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেন।

দিনাজপুর : করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর তিন উপজেলার ১৬৯টি বাড়িসহ দুটি গ্রামকে লকডাউন করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ জানান, দিনাজপুর সদর, ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর ওই রোগীর বাড়িসহ আশপাশের মোট ১৬৯টি বাড়ি ও দুটি গ্রামকে লকডাউন করা হয়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈরে শিক্ষার্থীসহ একই গ্রামের দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় গতকাল উপজেলা প্রশাসন চার গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে জাথালিয়া গ্রামসহ আশপাশের বংকুরি, সিঙ্গাপুর বাজার, ইটালি বাজার এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগ নেতা মজিবুর রহমান প্রধানের স্ত্রী ও মেয়েরও পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, মৃত মজিবুর রহমানের বাড়িতে ৩০ পরিবার ভাড়ায় বসবাস করেন। বর্তমানে সবাইকেই লকডাউনে রাখা হয়েছে। তারা বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

নীলফামারী : নীলফামারী জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল থেকে এটি কার্যকর করে ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ আকারে প্রচার চালানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। লকডাউনের ফলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ, সাপ্তাহিক হাট/বাজার, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমা আরেফিন জানিয়েছেন, ফুলবাড়ীর কাশিপুরের কয়েকটি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। গত সোমবার রৌমারী উপজেলায় এক কিশোরের (১৭) করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। পরে উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের টাপুরচর এলাকার দুটি ওয়ার্ড লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর