রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বাদুড়ের দেহে পাওয়া গেছে নতুন ৬ ধরনের করোনাভাইরাস

প্রতিদিন ডেস্ক

বাদুড়ের দেহে পাওয়া গেছে নতুন ৬ ধরনের করোনাভাইরাস

বাদুড়ের দেহে নতুন ছয় ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। লাইভ সায়েন্স অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ এপ্রিল গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনভিত্তিক ‘প্লস ওয়ান’ জার্নালে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ ভাইরাসটিও করোনাভাইরাস পরিবারের সদস্য। বিজ্ঞানীরা সর্বশেষ কভিড-১৯-সহ এখন পর্যন্ত মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস পরিবারের মোট সাত ধরনের ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন। তবে বাদুড়ের মধ্যে নতুন পাওয়া ছয় ধরনের করোনাভাইরাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে পাওয়া কভিড-১৯, সার্স বা মার্স করোনাভাইরাসের জিনগত খুব একটা মিল নেই।

মিয়ানমারে বিজ্ঞানীরা বাদুড়ের মধ্যে ওই নতুন ছয় ধরনের করোনাভাইরাস খুঁজে পেয়েছেন। প্রাণী থেকে ক্ষতিকর কোনো কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে- তা জানতেই মিয়ানমার সরকারের অর্থায়নে গবেষণাটি চলছে।

এদিকে বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। তবে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, করোনাভাইরাস পরিবারের নতুন ভাইরাসটি কোনো প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এই প্রাণীটি সম্ভবত বাদুড়। জানা গেছে, মিয়ানমারে গবেষণারত বিজ্ঞানী দল ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১১ প্রজাতির ৪৬৪টি বাদুড়ের লালা ও মল সংগ্রহ করে। দেশটির তিনটি অঞ্চল থেকে মূলত এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন কারণে প্রাণীর সংস্পর্শে আসেন বেশি। বিজ্ঞানীরা বাদুড়ের লালা ও মলের নমুনার জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেন এবং মানুষের শরীরে পাওয়া করোনাভাইরাসগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। নতুন করোনাভাইরাসগুলো তিন প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে পাওয়া  গেছে। এর মধ্যে গ্রেটার এশিয়াটিক ইয়েলো প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে পাওয়া গেছে প্রেডিক্ট-কভ-৯০ ভাইরাস, রিনকেল-লিপড ফ্রি-টেইলড প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে পাওয়া গেছে প্রেডিক্ট-কভ-৪৭ ও প্রেডিক্ট-কভ-৮২ ভাইরাস এবং হর্সফিল্ডস লিফ-নোজড প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে পাওয়া গেছে প্রেডিক্ট-কভ-৯২, প্রেডিক্ট-কভ-৯৩ ও প্রেডিক্ট-কভ-৯৬ ভাইরাস। গবেষকরা জার্নালে লিখেছেন, নতুন এই ছয় ধরনের করোনাভাইরাস মানুষসহ অন্য প্রাণীর মধ্যে ছড়াতে পারে কিনা তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এই ভাইরাসগুলো যদি মানুষের শরীরে ছড়ায় তাহলে তার প্রভাব কী হতে পারে তাও স্বতন্ত্র গবেষণার দাবি রাখে। কারণ, কভিড-১৯, সার্স এবং মার্স ছাড়া আরও যে চার ধরনের করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে পাওয়া গেছে সেগুলো ততটা ক্ষতিকর নয়। প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে অন্তত ১ হাজার ৩০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। ভৌগোলিক কারণে স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি বৈচিত্র্যময়; শুধু এন্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই এর বসবাস রয়েছে। অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বাদুড় দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী। একটি গুহার মধ্যে একসঙ্গে কয়েক লাখ বাদুড় বসবাস করতে পারে। যে কারণে তাদের শরীরে বাসা বেঁধে থাকা বিভিন্ন ধরনের মারণভাইরাস সহজেই পরস্পরের সংস্পর্শে আসে। উঁচু স্তরের বেশ কয়েকটি ভাইরাস বাদুড় নিজের শরীরে বহন করে বলে ধারণা করা হয়। জিওটিস বলেন, বিজ্ঞানীদের মধ্যে বর্তমানে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, অত্যধিক উড়ার সক্ষমতার কারণে বাদুড়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বদলে গেছে। এই অনুমানের সমর্থনে বিজ্ঞানীরা বাদুড়ের জেনেটিক গঠনে বেশ কিছু পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর