বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সঙ্ঘাতের আশঙ্কায় জানাজায় বাধা দেয়নি পুলিশ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারী ছিলেন ইসলামবিষয়ক সুবক্তাদের অন্যতম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও দেশ-বিদেশে বরেণ্য এই আলেমের ভক্ত-অনুসারী রয়েছেন। সে জন্যই তার জানাজা পড়তে বহু মানুষ এসেছিল। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন সবাই। কিন্তু চলমান করোনা দুর্যোগের কারণে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এই জানাজা। করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষকে আসতে দেওয়া হলো এবং জনসমাগম ঠেকাতে পুলিশ কেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি সেটি নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে দেশের সর্বত্র।

তবে সেদিনের প্রেক্ষাপট বিবেচেনায় পুলিশ বাধা দিলে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর সেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে। পুলিশের ভাষ্য- মূলত এই সংঘাত এড়াতেই তারা বাধা দেয়নি। গত শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা এলাকায় জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা মাঠে জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজা হয়। মাঠে জায়গা না পেয়ে জানাজা পড়তে ভক্তরা মাদ্রাসা-সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় দাঁড়িয়ে পড়েন। এতে লকডাউন লঙ্ঘিত হয়। সেই দায়ে ওই দিন রাতেই পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১৯ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয় সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি) মাসুদ রানা ও সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল হককে। গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মার্কাসপাড়ায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারী। ওই দিনই বিভিন্ন মসজিদে নামাজ শেষে মৃত্যুর সংবাদ ও জানাজার সময় জানানো হয়। ফলশ্রুতিতে জানাজায় ঢল নামে মানুষের। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানিয়েছে, মাওলানা আনসারীর মৃত্যুর সংবাদ বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারকে তাৎক্ষণিক জানানো হয়েছিল। কখন ও কোথায় জানাজা হবে সেই তথ্যও জানিয়ে দেওয়া হয় সরাইলের ওসিকে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান নিজেই ওসি সাহাদাতকে ফোন করে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশ দিলে তিনি রাতেই মাদ্রাসায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও আশ্বস্ত করে জনসমাগম না করে স্বল্প পরিসরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজা হবে। জানাজার দিন সকাল সোয়া নয়টায় মাত্র ২০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে জানাজাস্থলে যান ওসি। তখনো পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়তি পুলিশ সদস্য পাঠাতে বলেননি তিনি। ওসি সাহাদাত জানিয়েছেন, তিনি মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীকে চিনতেন না। পুলিশের আরেটি সূত্র বলছে, জানাজার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাইরে থেকে আসা লোকদের কয়েকটি গাড়ি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা চেকপোস্টে আটকে দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন দায়িত্বরত পুলিশ। পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই তাদেরকে জানাজায় আসতে দেওয়া হয়। বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ চেকপোস্টেও একই রকম ঘটনা ঘটে। নাগরিক সংগঠনের নেতারাও মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রশাসন ও পুলিশ কঠোর অবস্থানে গেলে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারত। সেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি তাদের শীর্ষ পর্যায়ে জানানো। জানাজায় বিপুল জনসমাগমের বিষয়টি পুলিশের জন্য উভয় সংকট ছিল। বাধা না দেওয়াটা যেমন তাদের দোষ, তেমনি বাধা দিলে যে পরিস্থিতি তৈরি হতো তার দায় থেকেও পুলিশ রেহাই পেত না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ওই অবস্থায় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ হতো এবং তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হতো।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর