করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সারা দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাচ্ছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, এই ব্যবসায়ীরা বাঁচবেন না। তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাবেন না। কারণ প্রণোদনার শর্তে বলা হয়েছে- ব্যাংকে যাদের ঋণ আছে, তারা সেই ঋণের ৩০ শতাংশ পাবেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের পছন্দ না করলে ঋণ দেবে না। ব্যাংকগুলো সবসময় বড় ব্যবসায়ীদের পছন্দ করে। তাদের শত শত কোটি টাকা দিলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা দিতে আগ্রহী নয়। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবে না ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি। তিনি বলেন, সারা দেশের ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানগুলোতে গড়ে ১৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। সে হিসাবে ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন কর্মচারী। তারা এবং তাদের পরিবারগুলো অসহায়ের মতো এখন ঘরে অবস্থান করছেন। এই কর্মচারীদের বেতন প্রদানের আংশিক প্রয়োজন মেটাতে কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। ওই তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে দোকান কর্মচারীদের মূল বেতনের অর্ধেক হিসেবে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা প্রদান করবেন মালিকরা। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী হেফাজতে ইসলামের তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত খুচরা ব্যবসায়ীদের জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যেভাবে সহায়তা করেছিলেন, এবারও ক্ষতিগ্রস্ত খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্যোগ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, প্রতি কর্মচারীর গড় মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা হিসাবে, তাদের আংশিক বেতন হিসেবে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা প্রদানের জন্য ওই ঋণ তহবিল গঠনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি। এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিনা সুদে ঋণ পাবেন। প্রাপ্ত ঋণ থেকে কর্মচারীদের জীবিকানির্বাহের ব্যবস্থা করা হবে। এই ঋণ শুধু তারা পাবেন, যাদের দোকানে কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ জন বা তার নিচে। আগামী এক বছরের জন্য এই ঋণ দিতে হবে। যা ছয় মাস পর থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফেরত প্রদান শুরু করবেন। এরই মধ্যে যেসব ব্যবসায়ীর ঋণ রয়েছে, তাদের কিস্তি পরিশোধের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হোক। এক্ষেত্রে চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ আদায় বন্ধ করতে হবে।হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন নগদ টাকা লেনদেন করেন। আবার নগদ টাকায় বেতন পরিশোধ করেন। কিন্তু এখন দোকান বন্ধ থাকায় কিছু করতে পারছেন না। ফলে ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন মোট ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৭৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব দোকানে প্রতিদিন গড় বিক্রির পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। যা থেকে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ করেন মালিকরা।