শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে

সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

আকতারুজ্জামান

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে সব মানুষ এক ধরনের আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সব শ্রেণির শিক্ষার্থীই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে ও সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর ক্লাস চলছে। কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। তবুও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। তারা কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ। শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গণপরিবহন চালুর তিন সপ্তাহের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নোটিস দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ সম্ভবত এত বড় সংকটে পড়েনি। এসএসসি পরীক্ষার সব খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। খাতাগুলো প্রধান পরীক্ষকদের কাছে রয়েছে। পরিবহন চলাচল শুরু হলেই ওএমআর  শিটগুলো শিক্ষা বোর্ডে পৌঁছে যাবে। গণপরিবহন চালুর তিন সপ্তাহের মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশ করতে পারব ইনশা আল্লাহ। তিনি জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা যথাসময়ে (১ এপ্রিল) অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল সরকারের। কিন্তু করোনার কারণে এ পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি এখনো রয়েছে আমাদের। শিক্ষার্থীরাও পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে পরীক্ষা দিতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দুই সপ্তাহের নোটিস দিয়েই আশা করি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করতে পারব।

এ পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষার সময় ছুটি কমানো বা পরীক্ষা কমানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মানত, ঘরে থাকত তবে এ পরিস্থিতি দীর্ঘ নাও হতে পারত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় আরও দীর্ঘ হলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পর ফল প্রকাশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে। ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া কয়েক মাসজুড়ে চলে। আমরা ভর্তির এ সময় কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। তাদের শিক্ষাজীবন থেকে যেন বড় সময় নষ্ট হয়ে না যায়, বড় ধরনের সেশনজটের সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। দীপু মনি বলেন, ছুটি ঘোষণা করার মাত্র তিন দিনের মধ্যে গত ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস শুরু করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের লকডাউন অবস্থা দেখে এটি ভাবতে হয়েছিল যে, এদেশেও লকডাউন হয়ে যেতে পারে। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংকটকালেও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি। বর্তমানে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পাঠদান করছে। টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদানের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনা থেকে দূরে সরে না যায়, তাদের পড়াশোনার মধ্যে ধরে রাখা। এ ছাড়া করোনার সংক্রমণের সময়টা দীর্ঘ হলেও যেন ছাত্রছাত্রীরা খুব বেশি পিছিয়ে না পড়ে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুললে আমরা বুঝতে পারব, একাডেমিক দিক থেকে কতটা পিছিয়ে গেছে শিক্ষার্থীরা। সেই ক্ষতির দিক নিরূপণ করে তা কাটিয়ে উঠতে অতিরিক্ত ক্লাসের প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া অন্য ছুটিগুলোও কিছুটা কমিয়ে এনে পাঠদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যেন বড় কোনো ঝামেলায় না পড়ে, এ বিষয়টিকে সামনে রেখে যেসব উদ্যোগ নেওয়া দরকার তার সবই নেওয়া হবে।  

ডা. দীপু মনি বলেন, সব সংকটই কিছু সুযোগের সৃষ্টি করে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা বাসায় অনেক সময় পাচ্ছে। তাদের মন দিয়ে বাড়িতে পড়াশোনা করতে হবে। একই সঙ্গে শারীরিক, মানসিক বিকাশের দিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের নানা দুর্ভোগ, সমস্যা প্রত্যক্ষ করছে শিক্ষার্থীরা। এসব দেখে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সাহস অর্জন করতে হবে তাদের। এ পরিস্থিতি দেখে শিক্ষার্থীরা মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে শিখবে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। সংকটের মধ্য দিয়েই এসব গুণাবলি অর্জন করতে শিখবে তারা। এ ছাড়া সারা বছর নানা ব্যস্ততায় অভিভাবকরা সন্তানকে সময় দেওয়ার সুযোগ পান না। করোনা সেই সময় করে দিয়েছে। সন্তানকে ভালো মানুষ, সুনাগরিক তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে অভিভাবকদের। সন্তানের বন্ধু হয়েই এসব শিক্ষা দিতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যেসব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তার সব সাধ্যমতো নেওয়া হবে। কারণ, এটিই আমাদের দায়িত্ব, এটিই কর্তব্য। করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করে সব খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিয়মিত আমাদের সার্বিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি চান, এই শিক্ষার্থীরা হবে বিশ্বমানব, তারা বিশ্বমানের শিক্ষা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা, স্বপ্ন পূরণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিছু বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় করোনা পরিস্থিতিতেও টিউশন ফি, সেশন ফিসহ বিভিন্ন চার্জ পরিশোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে বাধ্য করছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন নিয়েই শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা হয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক খরচই হচ্ছে না। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন চার্জ আদায়ের ক্ষেত্রে একটু ছাড় দিলে অভিভাবকরাও স্বস্তি পেতেন, শিক্ষকরাও কিছু বেতন পেতেন। করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাইকেই কিছু ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর