রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় বিপর্যস্ত বিমান সংস্থা

চলছে বিশেষ ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহন, আজ বৈঠকে বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্ত, মের প্রথম সপ্তাহেই বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় বিপর্যস্ত বিমান সংস্থা

করোনার থাবায় বিপর্যস্ত দেশি-বিদেশি বিমান পরিবহন সংস্থা। লকডাউনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে সংস্থাগুলো। ঘুরে দাঁড়াতে দ্রুতই বাণিজ্যক ফ্লাইট চালু করতে বিমানবন্দর সচল করার পরিকল্পনা করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সগুলো। এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন। ৫ মে পর্যন্ত দেশে লকডাউন রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তো বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা সম্ভব নয়। আগামীকাল (আজ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক হবে। লকডাউন খুললেই বিমানবন্দর সচল রাখার আশা করছি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের এভিয়েশন খাত। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেশের চারটি বিমান সংস্থার প্রায় সব উড়োজাহাজ এখন গ্রাউন্ডেড। স্থবির হয়ে পড়া দেশের এভিয়েশন খাতে আয়ের পথ রুদ্ধ হলেও ব্যয় থেমে নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর। সিভিল এভিয়েশন চার্জ, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতনসহ নানা ব্যয় টানতে গিয়ে তাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে বলে জানান এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। কবে উড়োজাহাজগুলো আবার ডানা মেলবে সঠিক তথ্য কারও কাছে নেই। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমানকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১৫০০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সরকারের কাছে ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। জানা যায়, জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ দেশের চারটি বিমান সংস্থার মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে শুধু ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ গুয়াংজু রুটে চালু আছে। ফলে সব বিমান সংস্থার ৪৩টি উড়োজাহাজই এখন ‘গ্রাউন্ডেড’ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে বিমানের বহরে আছে ১৮টি উড়োজাহাজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বহরে আছে ১৩টি, নভোএয়ারের বহরে আছে সাতটি এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বহরে আছে ছয়টি উড়োজাহাজ। বিমান সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া ও ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৯০ কোটি টাকা আয় করেছে তারা। এ সময় বিমানের যাত্রী কমে গেছে ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এপ্রিলে এসে এ হার একেবারে শূন্য হয়েছে। কিন্তু বহরের ১৮টি বিমান রক্ষণাবেক্ষণেই প্রতি মাসে ব্যয় করতে হচ্ছে ২৬০ কোটি টাকা। ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। এ অঙ্কও কয়েকশ কোটি টাকা। বিমানের বিশাল কর্মী বহরের বেতন ও বিভিন্ন দেশে অফিস রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মাসে ২০৩ কোটি টাকা। এসব কিছুর জন্য এপ্রিল মাসে খরচ ৫৩৭ কোটি টাকা।

তাই ব্যয় কমাতে গত মার্চ মাসে বিমানের সব কর্মকর্তার ওভারটাইম ভাতা প্রদান বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ষষ্ঠ থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাসহ ককপিট এবং কেবিন ক্রুদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে ঋণ পাওয়ার ওপর এপ্রিল মাসের বেতন নির্ভর করছে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ?দুই মাস ধরে আমাদের কোনো আয় নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার আর্থিক চাপে পড়েছে বিমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১৫০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ঋণ পেলে বেতনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

ইউএস বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এভিয়েশন হলো দেশের সবচেয়ে বড় একটি খাত। এ খাত টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সহায়তা ও প্রণোদনা প্রয়োজন। বেসরকারি খাত রক্ষায় ল্যান্ডিং-পার্কিং ফি মওকুফ করতে হবে। অ্যারোনেটিকেল ফি মওকুফ করতে হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের লোন কিস্তি সুদমুক্ত করতে হবে। এভিয়েশন খাতের যে কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতায় চার্জ মওকুফ করা এ মুহূর্তে খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে এওএবি (এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। এওএবির মহাসচিব ও নভোএয়ারের এমডি মফিজুর রহমান বলেন, আমরা বর্তমান সংকটকালে সিভিল এভিয়েশন চার্জ, যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর ও জ্বালানির ওপর আরোপিত কর বাতিলের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি।

বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় করোনা পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তাই নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকরা দেশের দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। এক্ষেত্রে যাত্রীরা নিজেদের অর্থে টিকিট কেটে দেশে ফিরছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ইউএস-বাংলা বেশ কিছু ফ্লাইট পরিচালনা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪২২ জন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ থেকে ফেরত গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভুটান, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশের নাগরিক। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে আটকা পড়া এক হাজার ৭৯৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক ফিরে এসেছেন বিশেষ ফ্লাইটে। ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে গতকাল এবং আজ দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এতে ৪০০ ব্রিটিশ নাগরিক তাদের দেশে ফিরে গেছেন। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মাধ্যমে এ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান দিল্লি এবং জাপানে ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে। এ ছাড়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স চেন্নাইয়ে আটকা পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে।

এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান বলেন, দেশব্যাপী লকউডান ঘোষণা হওয়ায় উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কবে নাগাদ চালু হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের প্রত্যাশা ৫ মে লকডাউন শেষ হলে বিমানবন্দর সচল করা। তাহলে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো।

সর্বশেষ খবর