রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বেতনের দাবিতে গাজীপুরে ফের শ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ

গাজীপুর প্রতিনিধি

বেতনের দাবিতে গাজীপুরে ফের শ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ

গাজীপুরে লকডাউনের মধ্যেও গতকাল দিনভর বিক্ষোভ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম, কারখানা শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, কালিয়াকৈরের বাড়ইপাড়ার হেচং বিডি লিমিটেড পোশাক কারখানাটি নভেম্বর মাসে লে-অফের ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তখন অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন-ভাতাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি। কয়েকদিন আগে কারখানাটি ২৫ এপ্রিল চালু এবং আগামী ৭ মে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের তারিখ ঘোষণা করে গেটে নোটিস টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নিতে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পরও কারখানায় মালিক পক্ষের কাউকে না পেয়ে এবং কারখানার গেট খুলে না দেওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা তাদের দুই মাসের বকেয়াসহ পাওনাদি পরিশোধ এবং কারখানা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেয়। পরে শ্রমিকরা কারখানার গেটে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ আলোচনার জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে রবিবার সকালে আবারও কারাখানার গেটে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিকালে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে। এদিকে জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারে এটিএস সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতাসহ তাদের পাওনার দাবিতে সকাল থেকে গেটে জড়ো হতে থাকেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকেরা একপর্যায়ে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে কারখানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মালিক পক্ষ আগামী ৭ মে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দিলে বিকালে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে এলাকা ত্যাগ করে।

এ ছাড়াও একইদিন একই উপজেলার টেংরা কেওয়া বাজারের জামান ফ্যাশন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গেটে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা শিগগিরই পরিশোধের আশ্বাস দিলে তারা কারখানা এলাকা ত্যাগ করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ঘোষিত লকডাউন ভেঙে কিছু কারখানার শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে আসছে। গতকালও কয়েকটি কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের উদ্যোগে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের বেশিরভাগ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে জরুরি সেবার জন্য কিছু কারখানা খোলা রয়েছে। গত ১১ এপ্রিল গাজীপুর জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর