শিরোনাম
শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্যোগেও টিউশন ফি নিচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

পরবর্তী সেমিস্টারের কথা বলে ফি চাইছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বাসায় বসেই বেতন দিতে বলেছে মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ

আকতারুজ্জামান

করোনাভাইরাস সংক্রমণ দুর্যোগেও বিভিন্ন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেওয়া অব্যাহত রেখেছে। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই এই টিউশন ফি আদায়। বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এসব অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টার স্থগিত রেখে পরবর্তী সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি রেজিস্ট্রেশন চালু করেছে। আর এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে দাবি করছে পরবর্তী সেমিস্টারের টিউশন ফি।

 এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি বলেছে, দেশের সংকটময় মুহূর্তে কিছু প্রাইভেট  বিশ্ববিদ্যালয় সামার সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জানা গেছে, রাজধানীর মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে ঘরে বসেই মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করতে বলেছে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে টিউশন ফি নেওয়ার তালিকায় রয়েছে দিল্লি পাবলিক স্কুল (ডিপিএস), স্কলাস্টিকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চিটাগং গ্রামার স্কুল, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্যার জন উইলসন স্কুল, প্লে-পেন স্কুল, মিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইত্যাদি।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হামিদা আলী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের বেতন-ভাতা দিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেওয়া হয়েছে। কারণ, আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুদান পাই না। খিলগাঁওয়ে মিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দিয়ে অভিভাবকদের কাছে টিউশন ফি আদায় করছে। এদিকে দিল্লি পাবলিক স্কুলের অধ্যক্ষ হার্শ ওয়াল লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, সব ধরনের বকেয়া ফি সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ১৪ দিনের মধ্যে পরিশোধ করলেই চলবে। এদিকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতন বা যে কোনো ফি পরিশোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপ না দিতে সম্প্রতি নোটিস জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর বা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন বা অন্যান্য ফি আদায় করতে বলা হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা ইংরেজি মাধ্যমের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা পর্ষদ বরাবর পাঠানো হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের এ নির্দেশনায় বলা হয়, ইংরেজি মাধ্যমে নিবন্ধিত জুনিয়র ক্যামব্রিজ/ক্যামব্রিজ/সিনিয়র ক্যামব্রিজ (এ লেভেল, ও লেভেল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি প্রযোজ্য হবে। বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা প্রতিবেদককে বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের জন্য এ নোটিস দেওয়া হলেও বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

অভিযোগ রয়েছে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের চলতি সেমিস্টার স্থগিত রেখে পরবর্তী সামার ২০২০ সেমিস্টারের প্রি-রেজিস্ট্রেশন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, ইউজিসির নির্দেশ মেনেই স্প্রিং সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত রেখে সামার সেমিস্টারের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তরা ইউনিভার্সিটিও একইভাবে সামার সেমিস্টারে এনরোলমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। শিক্ষার্থীদের সব বকেয়া পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে তাদের নোটিসে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, চতুর্থ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়েই পঞ্চম সেমিস্টারে এনরোলমেন্ট করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বকেয়া পরিশোধ করে পরবর্তী সেমিস্টারের টিউশন ফি পরিশোধ করতেও বলেছে কর্তৃপক্ষ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের আংশিক বেতন দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধের চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও এ স্কুলটি বকেয়া বেতন চেয়ে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনেকে মার্চের বেতন পরিশোধ করতে পারেননি। এ ছাড়া যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা এপ্রিলের বেতনটিও পরিশোধ করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবিকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর