রবিবার, ১৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও প্রণোদনার ভাগ চায়, উদ্বেগ বেসরকারি খাতের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও প্রণোদনার ভাগ চায়, উদ্বেগ বেসরকারি খাতের

করোনাভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকার যে প্রণোদনা সুবিধা ঘোষণা করেছে তার ভাগ চাইছে সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বেসরকারি খাতের মতো সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতির মুখে পড়েছে। সুতরাং ঘোষিত প্রণোদনা থেকে তাদেরও সুবিধা দিতে হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) কর্তৃক পরিচালিত ৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান : প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, গাজী ওয়্যারস লি, এটলাস বাংলাদেশ লি., ইস্টার্ন ক্যাবলস লি., ন্যাশনাল টিউবস লি., জিইএম কো. লি., বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লি. ও ইস্টার্ন টিউবস লি.র জন্য ২৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা চলতি মূলধন হিসেবে প্রণোদনা সুবিধা চাওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি  মোকাবিলায় ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ওই প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৯ শতাংশ সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা চলতি মূলধন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। যেখানে ঋণের সুদের সাড়ে ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবে ও বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) জন্য চলতি মূলধন দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধার কথা বলা হয়, যাতে ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেওয়ার কথা। মূলত এই দুটি প্যাকেজেই ভাগ বসাতে চায় সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। ওই প্যাকেজে সরকারি শিল্প খাত সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে সরকারি খাত সম্পর্কে কোনো বিবরণ নেই। কভিড-১৯ এর প্রভাবে সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানও সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানও চলতি মূলধন হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতের ন্যায় সমহারে ঋণ নিয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সরকারি শিল্প কারখানাসমূহ চলতি মূলধন পেলে এ বিপর্যয়ে তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে। তবে বেসরকারি খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনায় সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের ভাগীদার হতে চাওয়ার আগ্রহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তারা। বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনিতেই প্রতিবছর সরকারের পক্ষ থেকে শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। ফলে করোনাভাইরাসের কারণে বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন, এতে তাদের ভাগ বসানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। সরকার চাইলে তাদের জন্য পৃথক সুবিধা দিতে পারে। কিন্তু ঘোষিত সুবিধা থেকে সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া হলে বঞ্চিত হবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি খাত।

সর্বশেষ খবর