বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

এক রুবেলের বদলে আরেক রুবেল জেলে

ব্যবস্থার নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসামির নাম ও তার বাবার নামের মিল থাকায় এক রুবেলের অপরাধে আরেক রুবেলকে কারাগারে পাঠিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের পুলিশ। এ ঘটনায় দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি এ ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও হাই কোর্টকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়। এর আগে ‘এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাই কোর্টের নজরে আনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। অ্যাডভোকেট শিশির মনির আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাঁজা সেবনের অভিযোগে ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬) গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন (মামলা নম্বর-১৫) এসআই আবদুস সালাম। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পাঁচ দিন পর রুবেল জামিনে মুক্তি পান। তিন দফা আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি। ওই বছর ১০ জুলাই এসআই বাবুল ইসলাম আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর পরোয়ানাটি দীর্ঘদিন শিবগঞ্জ থানায় পড়ে ছিল। হঠাৎ ১০ মার্চ রাতে ওই পরোয়ানামূলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে (২৩) গ্রেফতার করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরপরাধ রুবেলের বাবা মো. মন্টু ও এলাকাবাসী বলেছেন, কয়েক বছর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে দুই পা ভেঙে যায় বন্দী রুবেলের। দুই বছর বিছানায়ই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা হাঁটতে পারলেও বাঁ পায়ে শক্তি নেই তার। অভাবের তাড়নায় তিনি জামাইপাড়ায় পাঁকা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের গ্রামের ফাঁকা বাড়িটি দেখাশোনা করতেন। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে মামলার মূল আসামি রুবেল বাবুল বছরখানেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। প্রকৃত আসামির বাবা মন্টু আলী বলেন, ‘বছরখানেক আগে রুবেল গ্রাম ছেড়ে কোথায় গেছে তা জানি না। তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।’ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে অনেক চেষ্টার পর মূল আসামি রুবেল বাবুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ধরেছিলেন শিবগঞ্জ থানার এক কনস্টেবল। পরে এসআই আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যান। এরপর মামলা হালকা করার জন্য সোনা মিয়া নামের একজন দালালের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয় পুলিশ। পরে ওই সোনা মিয়াই উকিল ধরে আমার জামিন করান। আমাকে বলা হয়েছিল মামলাটি আর নেই। এরপর আর খোঁজ করিনি।’

সর্বশেষ খবর