রবিবার, ৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গ নিয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন শিক্ষক ও একজন পুলিশসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে একজন, গাইবান্ধায় দুজন, ঢাকার ধামরাইয়ে একজন, চট্টগ্রামে তিনজন, বরিশালে দুজন, রাজশাহীতে একজন, ময়মনসিংহে একজন, বগুড়ায় একজন, সিলেটে একজন ও জামালপুরে একজন মারা গেছেন। তাদের অনেকের করোনা পরীক্ষা করা হলেও ফলাফল পাওয়ার আগেই তারা মারা যান। মৃত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘর লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- করোনার উপসর্গ নিয়ে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে জেলা শহরের নিজ বাসায় তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা। সূত্র জানায়, ওই ব্যক্তি (৬০) দীর্ঘদিন ধরে কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গাইবান্ধায় করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার এবং অপরজন পলাশবাড়ী উপজেলার। দুজনই পঞ্চাশোর্ধ্ব। এর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আরজ খলশী পাড়ার আবদুর রহমান (৫২) করোনা উপসর্গ নিয়ে গত শুক্রবার রাতে মারা যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তার পাশ থেকে সরে যান স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম মেহেদী হাসান বলেন, মৃত আবদুুর রহমান গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চত্বরে চায়ের দোকান করতেন। তিনি অনেক দিন থেকেই ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় অসুস্থ ছিলেন। তিনি তার বাড়িতেই চিকিৎসাধীন থেকে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় মারা যান। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা করোনার ভয়ে মৃতের কাছ থেকে সরে যান। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল বেলা ১১টার দিকে পুলিশ, আরএমও, উপজেলা ভূমি অফিস মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন এবং গ্রামবাসীর সহায়তায় দাফন কাজ করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে পরিবারের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার এক তরুণী (১৮) মারা গেছেন। জানা গেছে, সকালে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকার ধামরাই উপজেলার একটি গ্রামের ওই তরুণীকে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। এ দিন দুপুরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়। পুলিশের মৃত্যু : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তার নাম একরামুল ইসলাম। তিনি সীতাকুন্ড পৌর সদরের উত্তরবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় একা থাকতেন। শুক্রবার রাত বা শনিবার ভোরের দিকে তিনি মারা গেছেন বলে পুলিশের ধারণা। সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, শুক্রবার রাতে এসআই একরামুল ইসলাম জানান, তার জ্বর ১০০ ডিগ্রির কাছাকাছি। পাশাপাশি করোনার অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। তাকে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে বলেন তিনি। কিন্তু সকালে জানতে পারেন, ওই পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। বরিশালের গৌরনদী পৌর সদরে ও পাশের আগৈলঝাড়া উপজেলায় শুক্রবার জ্বর ও শ্বাসকষ্টে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ছিলেন কিনা জানতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ বলেন, গৌরনদী উপজেলার এক গৃহবধূ (৪০) কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে তিনি বাড়িতে থেকে নিজেদের মতো চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। বিকালে নিজ বাড়িতে ওই নারী মারা যান। করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগী মারা গেছেন। তার নাম জাকির হোসেন (৫০)। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর ১টার দিকে মারা যান তিনি। জাকির হোসেনের বাড়ি নাটোর। তার ছেলে একজন চিকিৎসক। জানা গেছে, তিনি ঢাকায় ছেলের বাসায় ছিলেন। সেখানেই কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। এরপর তিনি নাটোর চলে যান। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এ জন্য শুক্রবার বিকালে তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। করোনার সব ধরনের উপসর্গ থাকায় শনিবার সকালে তার নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার আগেই এই রোগী মারা গেছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল সকালে ময়মনসিংহ নগরীর এসকে হাসপাতালে এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেন, ত্রিশাল উপজেলার ধলা আদর্শ কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক কামরুল হুদা শাকের। সিভিল সার্জন ডা. মশিউল আলম জানান, জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার রাতে তাকে এসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করে মমেক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বগুড়ায় করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গোলাম রব্বানী নামের (৬০) ওষুধ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার মরদেহ স্বাস্থবিধি মোতাবেক দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি বগুড়া শহরের নাটাইপাড়ার বাসিন্দা। জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিল। শনিবার সকালে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে ভর্তি করার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের নমুনা দিয়ে টেস্ট করার কথা বলা হয়। ভর্তি করে ওয়ার্ডে নেওয়ার সময় তিনি মারা যায়। জামালপুরে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা নিয়ে ঢাকা ফেরত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওই নারীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার রাতে সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। ৪৭ বছর বয়সী ওই নারী ঢাকার মুগদায় দর্জির এবং তার স্বামী রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন বলে ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন রতন জানিয়েছেন তিনি বলেন, তিন দিন আগে সন্তানসহ এ দম্পতি বাড়িতে আসেন। ঢাকা থেকেই ওই নারী জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, গলাব্যথাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বাড়িতে আসার পর শুক্রবার রাত ৮টায় তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর