রপ্তানি খাতে যে সমস্যা তা কিন্তু অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক। এখন আন্তর্জাতিক বাজার যদি চাঙ্গা না হয়, তবে যতই চেষ্টা করা হোক কাজ হবে না। আশার কথা, আন্তর্জাতিক মার্কেট ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমেরিকা-ইউরোপের স্টোরগুলো খুলছে। কোনো কোনো জায়গায় লাইন ধরে ক্রেতারা পণ্য কিনছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ পাঁচ-ছয় মাস শিল্পকারখানাগুলো চালু রাখা, যেন শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে না যায়। গত দু-তিন সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নতির একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। চাহিদাও বাড়ছে। এখন সামনের যে ছয় মাস টিকে থাকাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। যদি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বন্ধ ফ্যাক্টরিতে কেউ অর্ডার দেবে না। বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আপৎকালে কারখানাগুলো খুলে রাখা, যাতে শ্রমিকরা বেকার না হয়। এজন্য আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, যে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে ২ শতাংশ সুদে তিন মাসের জন্য, এটিকে আরও তিন মাস বর্ধিত করা যায় কিনা সরকারের ভেবে দেখা উচিত। এ প্রণোদনা প্যাকেজটি খুবই কার্যকর ছিল। এটি না হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেত। রাস্তাঘাটে শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়ে যেত। এ ধরনের প্রণোদনা অন্যভাবেও আসতে পারে। সেটি হতে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একরকম, বড় শিল্পের জন্য অন্যরকম। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় সরকারের উচিত শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে এ প্রণোদনাকে কিছুদিনের জন্য অব্যাহত রাখা এবং আরও যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সরকার এরই মধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন ঋণ শ্রেণিকরণ না করার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। রপ্তানি তহবিল বাড়িয়েছে। তো এ ধরনের সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। এ ছাড়া আমাদের উদ্যোক্তাদের মানসিকতা হচ্ছে বড় ভলিউমে পণ্য সরবরাহ করা। যেসব অর্ডারে ভলিউম কম হয়, শিপম্যান্ট কম হয় সেদিকে আগ্রহী নন তাঁরা। এখন ক্রেতাদের অনলাইনে বিনিয়োগ বাড়ছে। ফলে মালিকদের মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার, যাতে অভ্যন্তরীণ বাজারেও অনলাইনভিত্তিক ছোট ছোট ডেলিভারিতে পণ্য সরবরাহ করা যায়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি একই সঙ্গে উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।