শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শনির আখড়া বাজার। একই দোকানে একাধিক লোকের সমাগম, নেই শারীরিক দূরত্ব। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। দেখা যায়, গায়ে গা লাগিয়ে যে যার মতো ঘুরছেন, বাজার করছেন, গল্প করছেন। অনেকের মুখে মাস্কও নেই। দোকান বা মার্কেটের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও নেই। দেখে মনে হচ্ছে ঈদ বা কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজার করতে এসেছেন সবাই। শুধু শনির আখড়া বাজারই নয়, রাজধানীর প্রায় সব বাজারের চিত্র একই। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই বাজারে, রাস্তাঘাটে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছেন সবাই। যানবাহনেও কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও টানা দুই মাসের বেশি সময় সাধারণ ছুটি শেষে জীবন ও জীবিকার তাগিদে সীমিত পরিসরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালু হয়েছে। ছোট বড় শপিং মল ও বিভিন্ন মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে। শুরুর দিকে গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কম হলেও বর্তমানে যাত্রী সংখ্যাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতিও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অধিক সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েও করোনাকে ভুলতে বসেছে নগরবাসী। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। আমাদের অপ্রয়োজনীয় চলাচল, ঘোরাঘুরি বন্ধ করতে হবে। আমি নিজেকে নিরাপদে রাখতে না পারলে এর মাধ্যমে প্রচুর মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে, অনেকের মৃত্যু ঘটবে। এ অসুস্থতার কারণে মানুষের মধ্যে ভালো থাকার যে অনুভূতি সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। গত কয়েকদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর মৈত্রী মাঠ, রেলগেট, মালিবাগ বাজার ও রেলগেট সংলগ্ন বাজার এবং রামপুরা বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাদের কেউ কেউ হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পরলেও অনেকে দুটির কোনোটিই পরেননি। নেই হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা। অনেকে কথা বলার সময় মাস্ক খুলে ফেলছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আমরা প্রথমেই ক্রেতাদের সতর্ক করে থাকি। কিন্তু ক্রেতারাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আর ক্রেতারা বলছেন, দোকানের সামনে কোনো ফিতা বা রশি টাঙানো থাকলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়। তবে সবার মাঝে অসচেতনতাই বেশি। জানতে চাইলে শনির আখড়া বাজারের মনোয়ারা ডিপাটমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা ক্রেতাদের সতর্ক করেছি, তবুও তারা আগে পণ্য কিনতে চায়। এভাবেই ভিড় তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও সব ঠিক ছিল। এখন যত দিন যাচ্ছে তত ভিড় বাড়ছে। মিষ্টি নামে এক ক্রেতা জানান, দেশ করোনায় আক্রান্তের ভয়াবহ অবস্থা। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। আমাকে সবার আগে পণ্য কিনতে হবে, এ সংস্কৃতি চলছে। এতে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। হাবিব নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, আগে দোকানগুলোতে ফিতা টাঙানো থাকত, দূরত্ব মানতে বলা হতো, এখন সেটা বলা হয় না। দোকানিরাও সচেতন করছেন না, আমরাও সচেতন হচ্ছি না। এদিকে রাজধানীতে গণপরিবহনে উঠতে গিয়ে হুড়োহুড়ি করার ঘটনা এখন নিয়মিত। করোনার ভয় ভুলে ঢাকার পুরনো চিত্রই ফিরিয়ে আনছেন সবাই। গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রীর বসার কথা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ঢাকা থেকে কিংবা অন্য জেলা থেকে ঢাকা কিংবা বড় শহরের দিকে যাত্রা করার সময় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পথে যাত্রী নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনে জীবাণুনাশকও ছিটাতে দেখা যায়নি। অথচ স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নিয়মিত বিরতিতে যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটাতেই হবে।