পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বেতন দেওয়ার জন্য আরও টাকা চায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এর আগে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার অংশ হিসেবে শ্রমিকদের বেতন দিতে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয় সরকার। সংগঠন দুটির এ আবেদনের বিষয়ে সরকার অবশ্য এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে অর্থ বিভাগের এক সূত্র জানান, অর্থমন্ত্রী এটা নাকচ করে দিয়েছেন। অর্থ বিভাগ মনে করে, আপাতত চলতি বাজেটের আওতায় নতুন করে কোনো প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া এখন অর্থবছরের মাত্র তিন দিন বাকি রয়েছে। ফলে নতুন করে কিছু দিতে হলে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ভাবতে হবে। সেটাও বেশ কঠিন হবে বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত এপ্রিলের শুরুতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকা গার্মেন্ট শ্রমিকদের এ্রপ্রিল, মে ও জুনের বেতন-ভাতা বাবদ ছাড় করে অর্থ বিভাগ। যদিও অভিযোগ রয়েছে, এখনো প্রায় ১৫ শতাংশ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেননি। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতনের জন্য বিক্ষোভ করছেন। এ অবস্থায় আরও তিন মাসের বেতন দিতে বিজিএমইএ
সরকারের কাছে নতুন করে একটি প্যাকেজের আওতায় টাকা চেয়েছে। এ টাকা চেয়ে গত ২২ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক ও বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান। কভিড-১৯ মহামারীর আঘাত কাটিয়ে উঠতে এপ্রিলে দেওয়া সহজ শর্তের ওই ঋণ তৈরি পোশাক খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করে সংগঠন দুটি। এজন্য তারা অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নতুন করে আরও তিন মাসের বেতন দিতে একই রকম সহজ শর্তের ঋণ বা প্রণোদনা চেয়েছেন। এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর প্রভাবে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে স্বল্পপরিসরে নতুন কিছু রপ্তানি আদেশ আসছে। আবার কিছু কিছু পণ্য শিপমেন্টও হচ্ছে। কিন্তু এসব শিপমেন্টের বিপরীতের বিলের অর্থ পেতে অন্তত আরও ছয় থেকে আট মাস বিলম্ব হবে। ফলে এ সময়টায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা। এমনকি সরকার প্রণোদনা না দিলে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন দুই সভাপতি। অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা তাদের অযৌক্তিক চাহিদা। সরকার তো সবসময়ই তাদের সহায়তা দিয়ে আসছে। প্রত্যেক গার্মেন্ট মালিক বিপুল অর্থবিত্তের মালিক। কিন্তু তারা কখনো এক পয়সা লোকসান গুনতে চান না। এমনকি স্বল্প মুনাফা করেও তারা ক্ষান্ত থাকেন না। ফলে বারবার সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করেন শ্রমিকদের দোহাই দিয়ে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এমন আবদার তো নতুন কোনো ইস্যু নয়। এটা তারা সবসময় করেন। যখন তারা বেশি বেশি মুনাফা করেন তখন তো শ্রমিকদের কোনো সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেন না। আর মুনাফা সামান্য কম হলে কিংবা লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিলেই শ্রমিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। এটা অনৈতিক।