বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রবাসী ব্যবসায়ীদেরও ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করত আজম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী ও মানব পাচার চক্রের অন্যতম হোতা আজম খান ওরফে ডন আজিমের একের পর এক চাঞ্চল্যকর কাহিনি বেরিয়ে আসছে। প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলতে আজম খান ‘টোপ’ বানাত দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া সুন্দরী নারী ও উঠতি মডেলদের। ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নিতে প্রবাসী ব্যবসায়ীকে নিঃস্ব করে দিত। অভিযোগ রয়েছে, যাদের দিয়ে ব্যবসায়ীদের শিকার করত সেই নারীদেরও বঞ্চিত করত প্রাপ্য হিস্সা থেকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খান বলেন, ‘জীবনে অনেক খারাপ মানুষের কথা শুনেছি কিন্তু আজম খানের মতো এমন খচ্চরের কথা শুনিনি। বাংলাদেশ থেকে লোকটা নানা প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের এখানে এনে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করত। মাসের পর মাস কাজ করিয়ে কোনো টাকা দিত না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তার ফাঁদে অনেকে পড়লেও লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ হয়েছে মাত্র দু-একটি। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, আমিরাতের নারী ও মানব পাচার চক্রের হোতা আজম খান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশি মেলা ও উৎসবের নামে দেশ থেকে সুন্দরী ও উঠতি মডেলদের নিয়ে আসত আমিরাতে। তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে। বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করা হতো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। অনেক ক্ষেত্রে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে প্রবাসী ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে রাখত আজম খান সিন্ডিকেট। এরপর ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হতো কোটি কোটি টাকা। এভাবে আজম খানের সুন্দরী নারীদের টোপে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। উঠতি মডেল ছাড়াও গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সহস্রাধিক নারী নিয়েছে আজম সিন্ডিকেট। আমিরাতের দেরা দুবাই, ফুজিরা ও রাস আল খাইমাতে আজম সিন্ডিকেটের কমপক্ষে ১০টি ড্যান্সবার ও হোটেল রয়েছে। এসব ড্যান্সবার ও হোটেলে দেশ থেকে আনা মেয়েদের দেহব্যবসায় খাটানো হতো। টাকা চাইলে এদের ওপর নেমে আসত অমানুষিক নির্যাতন। প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতারা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আজম খানের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরাই মূলত প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নিয়ে আসে আজমের ডেরায়। দুবাই কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খান বলেন, ‘ফুজিরা রাজ্যের সিটি টাওয়ার হোটেল থেকে তিন মেয়ে ফোন করে জানায় এক বছর কাজ করার পরও তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তখন আজম খানের বিষয়ে আমরা প্রথম জানতে পাই। পরে পুলিশের সহায়তায় ওই দিন নারীকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।’

সর্বশেষ খবর