মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি

তিন দিনে তিন হত্যা এক এলাকায়

মাহবুব মমতাজী

তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি

সিয়াম শেখ নামে এক কিশোর ধূমপান করছিল তার চাচাতো ভাই রাকিব শেখের (২৪) সামনে। ঘটনাটি রাজধানীর মিরপুর এলাকার মণিপুরের। সিয়ামের ধূমপান করা দেখে তার বুকে জোরে আঘাত করে রাকিব। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায় সিয়াম। পরে গলা টিপে শ্বাসরোধে সিয়ামের মৃত্যু নিশ্চিত করে রাকিব। লাশ গুম করতে পাশের একটি ম্যানহোলে ফেলে দেয়। ঘটনাটি ঘটে ৯ জুলাই দুপুরে। পুলিশের তথ্যানুযায়ী তিন দিনে মিরপুরে অন্তত তিনটি হত্যাকান্ড ঘটে। ক্লু-লেস এসব ঘটনার রহস্য এক সপ্তাহের মধ্যে উদ্ঘাটন করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তারা জানতে পারেন প্রতিটি হত্যাকান্ডই ঘটেছে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে।

মিরপুর মডেল থানার এসআই রেজাউল করিম জানান, প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে রাকিবকে মিরপুর বারেক মোল্লার মোড় থেকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে সে লাশ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকারও করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ম্যানহোল থেকে সিয়ামের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, সিয়ামের বাবা আবুল বাশার শেখ এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাকিব ও তার মা তাসলিমা বেগমকে (৩৮) আসামি করে একটি মামলা করেছেন। একই দিনে মিরপুর পানির পাম্প কাঁঠালতলা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাঁচ তলা থেকে পড়ে হাবিবুর রহমান (৫০) নামে একজনের মৃত্যু হয়। তিনি ভবনটির ঠিকাদার ছিলেন। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আসলে সেটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে হাবিবকে। রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন, সিহাব সুমন নামে ওই ভবনের এক নির্মাণশ্রমিক ধাক্কা দিয়ে হাবিবকে ফেলে দেন। পাঁচ তলা থেকে পড়ে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে আঘাত লাগে হাবিবের। সেখান থেকে ছিটকে পড়েন রাস্তায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল    কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, তিনটি হত্যাকান্ডই ছিল ক্লু-লেস। তবে দ্রুত তারা সেগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন। প্রতিটির পেছনে ছিল তুচ্ছ বিষয়। এর একটি ছিল নির্মাণাধীন ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা। প্রথমে তাদের মনে হয়েছিল সেটি একটি দুর্ঘটনা। পরে মৃত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে সিহাব সুমন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হলে সে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মামলায় হাবিবের স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগম উল্লেখ করেছেন, নির্মাণাধীন ওই ভবনে কাজের তদারকি করতে গেলে নির্মাণকাজে ফাঁকি দেওয়া নিয়ে সিহাব সুমনের সঙ্গে তার স্বামীর কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সিহাব তার স্বামীকে লাথি মেরে ভবনের ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়। পড়ে গিয়ে তার স্বামীর প্রথমে আঘাত লাগে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের সঙ্গে। সেখান থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। এতে তার স্বামীর মাথা, মুখ, কপাল ফেটে রক্তাক্ত হয়। মিরপুর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এম এম মঈনুল ইসলাম জানান, সিয়াম ও হাবিব হত্যার দুই দিন আগে ৬ জুলাই আরেকটি ঘটনা ঘটে। মিরপুর পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় মায়াবী ভিলা নামে এক বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে রুবেল নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার বড় ভাই আকবর আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পাঁচ-ছয় জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িত নাজমুল হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর