বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্দরে আমদানি- রপ্তানির চিত্র স্বাভাবিক

চলতি অর্থবছরে বাড়বে আরও প্রবৃদ্ধি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

করোনার কারণে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। তার পরও সর্বশেষ অর্থবছরে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছেন ৩ হাজার ৭৬৪টি। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৬৯৯টি। এখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বন্দরে পণ্য খালাস স্বাভাবিক থাকায় বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেও ৪১ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। তার পরও এখানে সফলতা রয়েছে বলে ভাবছেন দায়িত্বশীলরা। কারণ, করোনার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর সচল ছিল প্রতিদিন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এ সময় কিছু কৌশলও ব্যবহার করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পণ্য খালাসে উৎসাহিত করতে ভাড়া মওকুফ, বেসরকারি ডিপোতে পণ্য পাঠিয়ে ইয়ার্ডে পর্যাপ্ত জায়গা খালি করা, কনটেইনার জাহাজে অপেক্ষমাণ সময় যাতে না বাড়ে সেজন্য বিকল্প পদ্ধতিতে জেটির সংখ্যা বাড়ানো- এসবের কারণে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে। গত প্রায় তিন মাস ধরে আমদানি-রপ্তানির চিত্র স্বাভাবিক রয়েছে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলায়। ফলে চলতি অর্থবছরে বন্দরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসজুড়ে ছিল করোনার প্রভাব। চীনে করোনা শনাক্ত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এ কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত করোনায় বিপর্যস্ত ছিল পুরো বিশ্ব। মন্দা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যেও। তার পরও সর্বশেষ এ অর্থবছরে ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন কার্গো পণ্য ওঠানো-নামানো হয়েছে বন্দরে। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৯ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৫ টন। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে এ বন্দর ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউস। আগের অর্থবছরে যা ছিল ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউস। এখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ করোনার দুঃসময়েও বন্দরে এমন ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারি কিছু সিদ্ধান্তের কারণে সচল আছে দেশের অর্থনীতির চাকা। এমন সাফল্যের জন্য বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া শিপিং এজেন্ট, টার্মিনাল অপারেটর, বার্থ অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আমদানিকারক-রপ্তানিকারকেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।’ এদিকে করোনার কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধাক্কা লাগলেও চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আগমন, কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে বন্দর পুনরায় সচল হতে শুরু করায় জাহাজ আগমনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও করোনা সংকটের মধ্যেই পণ্য হ্যান্ডলিং ও জাহাজের সংখ্যা বাড়ায় সন্তুষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে আমদানি-রপ্তানি কমার কারণে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেনি। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। ২০১৮-২৯ অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে ৬৫টি জাহাজ বেশি এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৯৯টি জাহাজের বিপরীতে বিদায়ী অর্থবছরে এসেছে ৩ হাজার ৭৬৪টি। বিদায়ী অর্থবছরের এপ্রিলে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি লাগে আমদানি-রপ্তানি খাতে। তবে ধীরে ধীরে আমদানি-রপ্তানি দুটোই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। করোনা সংকটের মধ্যেও জাহাজ ও পণ্য হ্যান্ডলিং বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘করোনা সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ১ ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হয়নি। বৈশ্বিক এ মহামারীর কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশের আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে বন্দরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটাই বড় সাফল্য। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সজাগ দৃষ্টি ছিল উল্লেখ করার মতো। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন দেশের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের সাপ্লাই চেইন যেন বন্ধ না হয়। পাশাপাশি এনবিআর, কাস্টম, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সহযোগী সব প্রতিষ্ঠান প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে বিধায় আমরা এখনো সাফল্যের সঙ্গে টিকে আছি। চলতি মাসে বন্দরের উৎপাদন আরও সন্তোষজনক অবস্থানে যাবে বলে আশা করছি।’ দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কার্গো ও কনটেইনার জাহাজের ৯৮ শতাংশ আসা-যাওয়া করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রপ্তানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই কনটেইনার জাহাজে পরিবহন করা হয়। গত অর্থবছরের ১০ মাসে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে এপ্রিল ও মে-তে কমে যায়। ফলে সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়েনি।

 

সর্বশেষ খবর