শিরোনাম
সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের পানি বাড়ছে উত্তরে, কমতে পারে দক্ষিণে

চার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের পানি বাড়ছে উত্তরে, কমতে পারে দক্ষিণে

তিন ফুট পানির নিচে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র - বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারি বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে সপ্তাহ ধরে প্লাবিত হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চল। গতকালও বাগেরহাট, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। তবে আজ থেকে উপকূলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তরপ্রান্তে। গত এক দিনের ব্যবধানে আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে যমুনার পানি। বর্তমানে যমুনা ছাড়াও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আত্রাই, ধলেশ্বরী ও পদ্মার পানি। সেই সঙ্গে অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল। গতকাল সকালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৪৫টিতে পানি বেড়েছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে চারটি নদীর পানি। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি। এই পানি বৃদ্ধি আজও অব্যাহত থাকতে পারে। আজ মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এদিকে সেপ্টেম্বরে আরেকটি স্বল্পমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। দেড় মাস বন্যার পানিতে ডুবে থাকার পর নদ-নদীর পানি কমায় গত দুই সপ্তাহ ধরে একে একে বন্যামুক্ত হয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। তবে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও কাদা থাকায় এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি বন্যাদুর্গতরা। এর মধ্যে নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করায় ওই সব এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- পটুয়াখালী : অমাবস্যার প্রভাবে টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পটুয়াখালীর শহর-বন্দরসহ গ্রামের পর গ্রাম। প্রতিবার জোয়ারেই তলিয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চলসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম। ভাটির সময় পানি নামার আগেই ফের আসছে জোয়ার। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। গত কয়েকদিনের মতো রবিবার দুপুরেও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার উপকূলীয় কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, মির্জাগঞ্জ, দুমকী উপজেলার বেশ কয়েকটি চরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে ও বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে কলাপাড়ার লালুয়া ও মহিপুরের নিজামপুরে তলিয়ে গেছে অন্তত ২০টি গ্রাম। চরাঞ্চলের বাড়িঘরসহ মাছের ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

চাঁদপুর : বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন উপজেলা ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও  জোয়ারে চাঁদপুর সদর, মতলব ও হাইমচরসহ নদীতীরবর্তী অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় সাধারণ মানুষ কর্মস্থলে যেতে পারছে না। সরেজমিন দেখা  গেছে, বৃষ্টির কারণে জনশূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট। মৎস্য খামারি জামাল হোসেন জানান, তার এলাকার এক থেকে দেড়শ মাছের খামার জোয়ারের পানিতে ভেসে  গেছে। এতে করে খামারিরা তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ক্রেতা নেই মুদি বা অন্যান্য দোকানেও। বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাব ও ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের অন্যতম উঁচু পর্যটন স্থান চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। এতে দেশের একমাত্র হরিণ, কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রটিতে থাকা বন্য প্রাণীরা সংকটে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, রক্ষা পায়নি কুমিরের ডিম  ফোটানোর জন্য কৃত্রিম ও প্রাকৃতিকভাবে তৈরি উঁচু মাটির একাধিক কেল্লা। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল প্রজনন কেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মো. আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের তুলনামূলক উঁচু স্থান হিসেবে পরিচিত করমজল পর্যটন কেন্দ্রও তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। লবণ ও বালুযুক্ত পানিতে করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ট্যাংকগুলো ডুবে গেছে। তবে বেষ্টনী থাকায় এখানকার কুমির ও বাটারগুল বাচকা কচ্ছপগুলোকে রক্ষা করা গেছে। প্রাকৃতিক উপায়ে মাটির কেল্লায় থাকা এপ্রিল ও মে মাসে পাড়া কুমিরের ডিম ও আবাসস্থল পর্যন্ত ডুবে গেছে। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার কথা। মাটির উঁচু কেল্লাগুলো ডুবে থাকায় এবার ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ : নদ-নদীর পানি কমলেও সিরাজগঞ্জের বন্যাকবলিত অনেক বাড়িঘর থেকে এখনো পানি নেমে যায়নি। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘরবাড়িতে পানি থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই মানুষের। এর মধ্যেই ফের যমুনার পানি বাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। বন্যা, বৃষ্টি ও ভাঙনে নাকাল জেলার লাখো মানুষ। দীর্ঘদিনের বন্যায় ঘরের টিন, বেড়া ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তীব্র স্রোতের কারণে যমুনার অরক্ষিত অংশে ভাঙন অব্যাহত থাকায় শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে কাজীপুরে ঢেকুরিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার ধসে গেছে। চৌহালী উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধের ৩০০ মিটার ধসে গেছে। সিমলায় প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত থাকায় নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের। দুর্যোগের মধ্যে আয় রোজগার না থাকায় এসব মানুষের মধ্যে চরম খাদ্য, ওষুধ ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত ডায়রিয়া, হাত-পায়ে ঘাসহ নানা রোগ।

সর্বশেষ খবর