মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
পুলিশের পোশাক পরে ছিনতাই

সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে ওরা ১১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা ১১ জন। কোনো সিনেমার গল্প নয়। তারা দাপিয়ে বেড়াত ঢাকা শহরের এপার থেকে ওপার। ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ছিনতাই করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। ডিবি পুলিশের পরিচয়ই ছিল তাদের প্রধান কৌশল। এমন একটি ছিনতাই চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানা। গত ১৯ ও ২০ আগস্ট ঢাকা এবং গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

এরা হলেন- সরোয়ার হোসেন ওরফে সরোয়ার খাঁ, দুলাল, আনোয়ার গুলদার, আমির, নাছির হাওলাদার, ইমন ওরফে কাজল কুমার দে, ইকবাল, সোহাগ খান, জাকির হোসেন, সুমন ও রমজান। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, দুটি ডিবি জ্যাকেট ও ব্যবসায়ী আজহারের কাছ থেকে নেওয়া টাকার মধ্যে ১৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সাইফুল আলম মুজাহিদ জানান, গত ১৭ আগস্ট পুরান ঢাকার জনসন রোডে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে আজহার নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে পথরোধ করে ৫৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। পরে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৯ আগস্ট ভোরে রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। সোহাগের দেওয়া তথ্যে ছিনতাইয়ের ওই ১১ জনের একটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। একই দিনে গাজীপুরের টঙ্গী থানার দত্তপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ইকবাল, জাকির ও সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের দেওয়া তথ্যে পরদিন ভোরে টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে সরোয়ার খাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে পল্টন ও নর্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুলাল, আনোয়ার, আমির, নাসির, ইমন ও রমজানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনেই রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সোহাগ, ইকবাল ও দুলাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং অন্য ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা একটি গ্রুপ হয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় ঠিক করে নেয় কোন এলাকায় ছিনতাই করবে। পরিকল্পনা করে নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থান নিয়ে টার্গেট করে। এরপর ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে টার্গেটে থাকা ব্যক্তির দেহ তল্লাশির নামে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তারা। পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, আপন দুই ভাই সুমন আর জাকির হোসেন এই চক্রের প্রধান। তারা ভয়ঙ্কর অভিযানে নিজেদের ডিবির নানা স্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিত। দুই ভাইয়ের এই অপরাধী চক্র ২০১৫ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরণ, গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অপকর্ম করে আসছিল। এই দলের দুই থেকে তিন সদস্য প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে। এরপর নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মামলা আছে বা অন্য কোনো ভয় দেখিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিতে চায়। গ্রুপের অন্য সদস্যরা তখন ঘটনাস্থলটি ঘিরে রাখে, যাতে পথচারীরা কিছু বুঝতে না পারে। এভাবে ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে মাসে অন্তত ১৫টি অভিযানে সফল হতো তারা। মিরপুর, গাবতলী, মাজার রোড, কল্যাণপুর, যাত্রাবাড়ী, নর্দা, উত্তরা, আজমপুর, বিমানবন্দর এলাকা, গুলিস্তান, বংশাল, তাঁতীবাজার, সদরঘাট ও কোর্ট-কাচারি এলাকায় সক্রিয় থাকত।

সর্বশেষ খবর