মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

চরম আর্থিক সংকটে দুই কোটি মার্কিনি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

স্বামীর নির্যাতনে গৃহত্যাগে বাধ্য হওয়া শিশু সন্তানসহ এক বাঙালি নারী করোনা মহামারীর জন্য নিউইয়র্ক সিটির আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছেন। গত সপ্তাহে তাকে বলা হয়েছে কাজ খুঁজে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার জন্য। আরেক বাঙালি মা দেলোয়ারা বেগমের ছেলে কাজ করতেন স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে যাতায়াতকারী ফেরিতে। সেটি বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে। সেখানে যারা কাজ করতেন সবাই বেকার হয়ে পড়বেন। জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস এবং ব্রুকলিনের বেশ কটি রেস্টুরেন্টে ব্যবসা (ভিতরে বসে খাবারের অনুমতি নেই) একেবারেই কমে যাওয়ায় কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে। এরা সবাই বাংলাদেশি। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় বিরাজ করছে অস্থিরতা। ওয়াশিংটন পোস্টে ২৩ আগস্টের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিগগিরই দুই কোটি মার্কিন পরিবারের সদস্যরা নিদারুণ কষ্টে নিপতিত হবেন। বাসা ভাড়া বকেয়ার জন্য তারা উচ্ছেদের শিকার হবেন। করোনা মহামারীর পর লকডাউনে থাকা কর্মহীন আমেরিকানরা সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে পেয়েছেন। তা দিয়ে দিন কাটছিল কোনোমতে। তবে অনেকে বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে সক্ষম হননি। ৩১ জুলাই সেই বেকার ভাতার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। এখনো বেকার রয়েছেন তিন কোটি আমেরিকান। যারা খাদ্য কিনতেই সক্ষম হচ্ছেন না, বাসা ভাড়া দেবেন কোত্থেকে। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটরা ‘হিরোজ অ্যাক্ট’ বিল পাস করেছেন ১৫ মে। কিন্তু রিপাবলিকান শাসিত ইউএস সিনেটে সেটি গুরুত্ব পায়নি। এর ফলে বাসা ভাড়া মওকুফের যে কথা উঠেছিল সেটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমনকি সাপ্তাহিক বেকার ভাতাও আগস্ট থেকে বন্ধ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেকার ভাতা ৪০০ ডলার করে দেওয়ার বিশেষ নির্বাহী আদেশ জারি করেন ৮ আগস্ট। রাজ্যগুলো অর্থ সংকটের কারণে সেটি বাস্তবায়িত করতে পারেনি। উল্লেখ্য, ডেমোক্র্যাটদের পাস করা বিলে এককালীন ১২০০ ডলার করে মাথাপিছু দেওয়ার কথা। সেটিও ঝুলে রয়েছে রিপাবলিকানদের অসহযোগিতায়। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ মিলিয়ন তথা এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় করোনা সহায়তা হিসেবে পুনরায় যদি বেকার ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা চালু করা না হয় তাহলে কঠিন এক সংকটে পড়বে গোটা আমেরিকা। ইতিপূর্বেকার মহামন্দাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে আসন্ন দুর্ভিক্ষাবস্থা- এমন আশঙ্কা করেছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. জ্যাচ পেরলিন। তিনি বলেন, কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিতে হবে বেকার মানুষের মধ্যে। উল্লেখ্য, চার সদস্যের একটি পরিবারের বার্ষিক আয় যদি ২৬ হাজার ২০০ ডলারের কম হয়, তাহলে সেই পরিবারকে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সর্বশেষ খবর