খাদ্যশস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা দিনাজপুরে ধানের পাশাপাশি বীরগঞ্জ, বিরামপুরের পর এবার খানসামার সমতল ভূমিতে চা চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উত্তর জনপদের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর পর দিনাজপুরের সমতলে চা চাষের ক্ষেত্র দিন দিন বাড়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন খানসামার খামারপাড়া ইউপির ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মমিনুল ইসলাম। তার ধানের জমিতে চা বাগান দেখে উৎসাহী হয়ে অনেকে চা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে খানসামার গোবিন্দপুর গ্রামের রাজিব ইসলাম আত্রাই নদীর তীরে চার মাস আগে ৩ একর জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন। এ ছাড়াও নেউলায় দুটি পরিবার ও পাকেরহাটের বাসিন্দা রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ঐশী চৌধুরীসহ অনেকে চা বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কৃষি অফিস জানায়, চা বাগানে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বাগানে যেন পানি না জমে, সে জন্য গাছের গোড়া উঁচু করে দিতে হয়। চা গাছের ছায়া দিতে মাঝে মধ্যে লাগানো যেতে পারে পেয়ারা, নিম, আম ইত্যাদি গাছ। এ ছাড়াও খরার সময় পানি দিয়ে গাছ সতেজ রাখতে হয়। মাঝে মধ্যে জীবাণুনাশক ওষুধও স্প্রে করতে হয়। গাছ যত বড় হবে, পাতার পরিমাণ ততই বাড়বে। তবে লাল মাকড়সা ও মশা চা পাতা যেন না খেয়ে ফেলে তার জন্য ওষুধ ছিটানো প্রয়োজন। খানসামার সহজপুর গ্রামে দেখা যায়, চা বাগান মালিক মমিনুল ইসলাম, তার বাবা নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক চায়ের পাতা সংগ্রহ করছেন। এ সময় চা বাগান নিয়ে মমিনুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে চাকরি করতে গিয়ে চা চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই বন্ধুর পরামর্শে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে খানসামা উপজেলায় এক একর জমিতে চা চাষ শুরু করেন। এতে জমি প্রস্তুত, বীজ, শ্রমিক মিলে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। এরপর প্রথম ৬ মাসের প্রতিমাসে স্প্রে, নিড়ানি ও সার দিতে ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর গাছ বড় হওয়ার পর এখন প্রতিমাসে ৯/১০ হাজার টাকা খরচ হয়। চা বাগান করার ৬ মাস পর প্রথম এক কেজি চা পাতা সংগ্রহ হয়েছিল। তবে এ বছর প্রথম ৩০০ কেজি, দ্বিতীয় ৯৩০ কেজি এবং শেষে ৮৭৫ কেজি চা পাতা ১৪ টাকা কেজি দরে দেবীগঞ্জ পপুলার চা কারখানায় বিক্রি করেন। বাগান থেকে ৩৫-৪০ দিন পর পর চা পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পাতা সংগ্রহের পরিমাণও বাড়বে। প্রতি মাসেই চা পাতা বিক্রি করা যাবে। খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে খানসামা উপজেলার অবস্থান হওয়ায় চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত। চা গাছে নিবিড় পরিচর্যা, পরিমিত পানি সেচ দিতে এবং যত্নবান হতে হবে। ইতিমধ্যে দুজন চা চাষে এগিয়ে এসেছেন। লাভজনক হওয়ায় চা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।