রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

আবার চাঙ্গা পুঁজিবাজার

আলী রিয়াজ

দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পুঁজিবাজার। করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রভাব কাটিয়ে পুুঁজিবাজারে সরব হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। বাজারে এই ইতিবাচক প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে কয়েকগুন। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজারের সূচক লেনদেন হার বেড়েছে আশানুরূপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এ আস্থা ধরে রাখতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাজের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।

জানা গেছে, দেশের করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হলে চরম সংকটের মুখে পড়ে পুঁজিবাজার। বাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে প্রায় দুই মাস লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। পরে সীমিত আকারে জুন মাসে লেনদেন শুরু হয়। তবে লেনদেন হার নেমে আসে মাত্র ৫০ কোটি টাকার নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ নিয়মে নির্দিষ্ট পরিমাণ দর নির্ধারণ করে দিয়ে লেনদেন চালু হয়। বিএসইসি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার পর পুুঁজিবাজারে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ পদক্ষেপে নতুন আস্থা ফিরে আসে। ফলে ঈদুল আজহার পর পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ায়। ৫০ কোটি টাকার নিচের লেনদেন হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়। গত এক মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে প্রায় ৭০০ পয়েন্টের বেশি। এ সময় ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত সপ্তাহের বাজার লেনদেনে দেখা গেছে, ডিএসইতে সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৮২৮ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৭ টাকার। আগের সপ্তাহেও গড় লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫৬ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন ৯ হাজার ৮৬৬ কোটি ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। একই চিত্র অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ১৪ হাজার ৬১০ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৬৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৮ টাকার। এই সময় সিএসইর বাজার মূলধন ৮ হাজার ৯৭৬ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বা ৩.০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। চাঙ্গা মেজাজে ফিরে আসায় পুঁজিবাজারে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। এক মাসের ব্যবধানে (১-১৫ জুলাই) তুলনায় চলতি মাসের প্রথমার্ধে (১-১৫ আগস্ট) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বেড়েছে ৯১ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ৮৯ শতাংশ। চলতি মাসের প্রথমার্ধে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৫৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার লেনদেন করেছেন। যার পরিমাণ জুলাই মাসের প্রথমার্ধে ছিল ২৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। জানতে চাইলে ডিএসই পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্প্রতি কিছু কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। শেয়ারবাজার থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। তারা টাকা উত্তোলন করে কোম্পানি চালায়নি। শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। পরিচালকদের ২ শতাংশ ও সম্মিলিত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন করা হলেও তা বাধ্য করা হয়নি। এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে চলমান পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা দরকার। ৬ মাসের মধ্যে এজিএম করে প্যানেল থেকে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। বাজার এখন উপযুক্ত বিনিয়োগ করার। মানুষের আস্থা ফিরেছে। এ আস্থা ধরে রাখতে হলে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর