বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সৌদি শ্রমবাজারে সংকট বাড়ল

কূটনীতিকদের ডেকে বাংলাদেশের অবস্থান জানালেন দুই মন্ত্রী, সৌদি ও বিমানের ১০টি করে ফ্লাইট সপ্তাহে, টিকিট পেতে কাউন্টারে ভিড়

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সৌদি শ্রমবাজারে সংকট বাড়ল

সৌদি আরবের প্রবাসী কর্মীদের ফিরে যাওয়া নিয়ে সৃষ্ট সংকট আরেক দফায় বাড়ল। করোনা মহামারীতে আটকে পড়া কর্মীরা নতুন করে সৌদি চাকরিদাতাদের ছাড়পত্র ছাড়া ফিরতে পারবেন না। তাই সব প্রবাসী কর্মীর সৌদি আরব ফেরা অনিশ্চিত হয়ে গেল। সেই সঙ্গে করোনার আগে ইস্যু হওয়া নতুন ভিসাগুলোও বাতিল হয়েছে। এগুলো নতুন করে ইস্যু হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এমন প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমঘন দেশগুলো ও মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন দুই মন্ত্রী। এখন বাংলাদেশের বড় এ শ্রমবাজারগুলো নতুন করে কী সিদ্ধান্ত দেয় তার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কুয়েতের আমির ইন্তেকাল করায় দেশটির প্রতিনিধির কেউ সভায় যোগ দেননি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করতে হলে চাকরিদাতাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র লাগবে। অন্যথায় কেউ কাজের উদ্দেশ্যে যেতে পারবেন না। চাকরিদাতা যদি চাকরি না দেন, তবে কর্মী যেতে পারবেন না। এখন পর্যন্ত ৬ হাজার লোক সৌদি আরব গেছেন এবং তারা অনুমতি নিয়ে গেছেন বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে সরকারের করণীয় কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি বলেন আমরা কী করতে পারি? আপনি চাকরি দেবেন বলেছেন, কিন্তু দিলেন না। এ ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? মালিক যদি চাকরি না দেয় তবে কী করার আছে? সরকার তো কারও চাকরি দিতে পারে না।’ প্রবাসীদের রাস্তায় নামার কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের নতুন চাকরি খুঁজতে হবে। তাদের বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানান, মার্চ পর্যন্ত ২৫ হাজার বাংলাদেশিকে নতুন ভিসা ইস্যু করেছিল সৌদি আরব এবং এ ভিসাগুলো বাতিল হয়ে গেছে ব্যবহার না করার জন্য। এদের সবাইকে নতুন করে ভিসা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আকামা, ভিসা এগুলো নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমাদের সমস্যা যা আছে তা কূটনীতিকদের জানিয়েছি। এ কথাগুলো তাদের সরকারের কাছে যাবে। তারপর ফলাফল কী হবে জানা যাবে। কিন্তু তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এর জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’ বাংলাদেশ আশাবাদী জানিয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু সব সময় বিকল্প চিন্তা করতে হয়। আমি আশা করলাম কিন্তু হলো না, তখন বিকল্প কী তা ভাবতে হবে। বিকল্প পরিকল্পনা করে রাখতে হয়। আমরা যদি একটি নিয়ে বসে থাকি এবং সেটি যদি না হয় তবে আমরা কোনো দিন শান্তিতে থাকব না। তাই যেসব প্রবাসী সৌদি আরবে যেতে পারছেন না, তাদের জন্য বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে।’

তবে বৈঠককে ফলপ্রসূ দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহে ২০টি করে ফ্লাইট যাবে। এর ফলে দ্রুতই অধিকসংখ্যক প্রবাসী সৌদি ফিরতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।’ সৌদি আরব ছাড়া অন্য কোনো দেশে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সমস্যা নেই বলে তিনি জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এখন সপ্তাহে ১৭টি ফ্লাইট চলাচল করে। তারা এটাকে আরও বাড়াতে চান। দেশে অবস্থান করা প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ আছে তাদের পর্যায়ক্রমে পাঠানো হবে।

টিকিট পেতে কাউন্টারে সৌদি প্রবাসীরা : সৌদি প্রবাসীদের ফেরার টিকিট রি-ইস্যু করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনস। ঢাকার মতিঝিলের বিমান অফিস এবং কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁও সেলস সেন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। গতকালও এ দুই বিমান সংস্থার কার্যালয়ের সামনে সৌদি প্রবাসীদের ভিড় ছিল। তবে আগের দিনগুলোর চেয়ে কিছুটা কম ছিল উপস্থিতি। অন্যান্য দিনের মতো রাস্তা অবরোধ বা বিক্ষোভের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

জানা গেছে, মতিঝিলে বিমান অফিস থেকে ৩১ মার্চ জেদ্দা রুটে, ২৪-২৫ মার্চ রিয়াদ রুটে, ২১ থেকে ২৪ মার্চ দাম্মাম রুটের যাত্রীদের টিকিট রি-ইস্যু করেছে বিমান। সৌদি এয়ারলাইনস ২৭০১ নম্বর থেকে ৩০০০ হাজার নম্বর  টোকেনধারীদের টিকিট রি-ইস্যু করে। বিমানের টিকিট পাওয়া সৌদি প্রবাসী মো. আলমগীর বলেন, ‘তার ভিসা ও আকামার (কাজের বৈধ অনুমতিপত্র) মেয়াদ রয়েছে আর এক মাস। টিকিট নিতে তিনি সকালেই এসেছেন। টিকিট পেতে তার কোনো সমস্যা হয়নি।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া প্রবাসীদের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, ‘আমরা আকামা, ছুটির মেয়াদ, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া ২০০ জনের তালিকা দিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা  নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। চলতি মাসে সৌদি এয়ারলাইনসের ৫টি ও বিমানের ৫টি ফ্লাইট ঢাকা  ছেড়েছে। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ জানান, যেসব ফ্লাইট ছেড়ে গেছে তার মধ্যে দুজন সৌদি এয়ারলাইনসের যাত্রীর করোনা পজিটিভ থাকায় তারা যেতে পারেননি। গত সপ্তাহ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করছেন সৌদি প্রবাসীরা। সচিবালয়ের সামনে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ করেন তারা। পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে তাদের ৭ দফা দাবিও জানিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। তাদের অন্যতম দাবি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছুটির মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো।

সর্বশেষ খবর