শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

চিন্তা দ্বিতীয় ঢেউ সামলানো নিয়ে

করোনা নিয়ে স্তরভিত্তিক পরিকল্পনা, পরিস্থিতি খারাপ হলে যান চলাচলে হতে পারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ, তবে লকডাউনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত

মানিক মুনতাসির

চিন্তা দ্বিতীয় ঢেউ সামলানো নিয়ে

আসন্ন শীত মৌসুমে দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কয়েক স্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব পরিকল্পনা স্তরভিত্তিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমত কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে দেশবাসীকে। এর পরও কোনো কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গণপরিবহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে। এতে করে সংক্রমণ রোধ করা সহজ হবে বলে মনে করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্যদিকে স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধই থাকবে। দোকানপাট, শপিং মল খোলা রাখার ব্যাপারে এলাকাভিত্তিক নতুন সূচি করা হতে পারে। তবে কোনো ধরনের কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান- যেমন ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার খোলা রাখা হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতও খোলাই থাকবে। তবে কঠোরভাবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এর পরও সংক্রমণ বাড়লে অনলাইন পদ্ধতিতে ঘরে বসেই অফিস-আদালত চালানোর প্রতি জোর দেওয়া হবে। তবে মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতি রক্ষার স্বার্থে পুনরায় লকডাউনের মতো পরিস্থিতিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি গত মার্চ-এপ্রিলের মতো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও বারবার ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশন খোলা রাখছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া কভিড-১৯-এর প্রভাব বাংলাদেশেও কমছে না। মৃতের সংখ্যা ওঠানামা করছে। বাড়ছে সংক্রমণের হারও। যদিও শনাক্তকরণ পরীক্ষার হার প্রায় প্রতিদিনই কমছে। অথচ আসন্ন শীত মৌসুমে কভিডের বিস্তার বাড়বে বলে সর্বত্রই এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায় প্রতিদিনই দেশবাসীকে সচেতন করতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার রোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বির এক যৌথ গবেষণা বলছে, ঢাকার অন্তত ৪৫ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। যেহেতু এটি একটি শ্বাসতন্ত্রকেন্দ্রিক রোগ এ জন্য ঠা-াজনিত সমস্যায় এ রোগের জটিলতা ও সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি সময়টাকে শীতকালীন সময় ধরে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশে আসতে পারে বলে ধারণা করছে সরকার। এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার ও ভয়াবহতা ঠেকাতে সরকার স্তরভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সবাইকে আবারও সচেতন করে তোলা হচ্ছে। ঘরের বাইরে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের তদারকি জোরদার করা হবে।

২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের এক ফলোআপ নথির সূত্র ধরে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ২০ কর্মদিবসের মধ্যে একটি ফলোআপ সভা করার কথা। সেই সভার জন্য তৈরি করা খসড়া কার্যপত্রেই এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে সংক্রমণ শুরুর ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় ঢেউ লাগতে শুরু করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই ঢেউয়ের ভয়াবহ বিস্তার ঠেকাতে ইতিমধ্যে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও কভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের মাত্রা প্রায় প্রতিদিনই কমছে। অবশ্য সরকার দাবি করছে, ইতিমধ্যে ৫ কোটির বেশি মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে লকডাউনে না গিয়ে সবকিছু খোলা রেখেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার ঠেকাতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ক্যাম্পেইন জোরদার করা হচ্ছে। একইভাবে কেউ বিদেশ থেকে এলে নৌ, বিমান, স্থল সব ধরনের বন্দরে কঠোর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে করোনা নেগেটিভ নিশ্চিত না হয়ে দেশে ঢুকতে না দিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেউ করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসার পরও যদি শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে কিংবা অন্য কোনো ধরনের লক্ষণ থাকে, তাহলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন মেনে চলতে হবে। বহির্গমনের ক্ষেত্রেও করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে যাতে কভিড-ননকভিড সব রোগী কাক্সিক্ষত সেবা পান তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সারা দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর