সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন এমপিরা। তারা বাণিজ্য ও খাদ্যমন্ত্রীর কাছে বাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ জানতে চেয়েছেন। ছয়জন এমপি প্রশ্ন তুলে বলেছেন- বাজারে চালের মূল্য অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী। হঠাৎ পিঁয়াজ ও রসুনের দাম অনেক বৃদ্ধির কারণ কী? বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রের। জানা গেছে, আগামীকাল ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশনের জন্য অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে মৌখিক উত্তর দানের জন্য এমপিদের প্রশ্ন-তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান। ওই প্রশ্ন তালিকায় ছয়জন এমপি বাণিজ্য ও খাদ্যমন্ত্রীর কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যশস্য নিয়ে লিখিত প্রশ্ন জমা দিয়েছেন। এতে বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান জানতে চেয়েছেন-দেশের বাজারে হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পিঁয়াজ ও রসুনের দাম অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী? জরুরি ভিত্তিতে পণ্যসমূহ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে কিনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম জানতে চেয়েছেন- দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কিনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করলে, তা কী। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা-২৮ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার জানতে চেয়েছেন- দেশের অর্থনীতিতে করোনার কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যে যে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর কাছে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক জানতে চেয়েছেন-গত বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধানের ফলন হয়েছে। তবুও বর্তমান বাজারে চালের মূল্য অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী। খাদ্য অধিদফতর ট্রাকে বিভিন্ন স্পটে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে, যা স্বল্প আয়ের লোকজনের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ট্রাক সেলে চালের পরিমাণ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি? চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম জানতে চেয়েছেন- প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের দাম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল জানতে চেয়েছেন- দেশে মোট খাদ্য চাহিদার পরিমাণ কত এবং কোনো ঘাটতি আছে কিনা। খাদ্য ঘাটতি থাকলে তা কীভাবে পূরণ করা হবে। এর আগে চাল, আলু, পিঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকানোর সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২৭ অক্টোবর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আলু-পিঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে কমপক্ষে ৫-৬ মাস আগে কোন কোন পণ্যের চাহিদা কত তা নিরূপণ করার সুপারিশ করা হয়। আর দেশের খুচরা, পাইকারি এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ওই সব পণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার উদ্দেশে মজুদ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আগামীতে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করার জন্য অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের সমন্বয়ে বৈঠক করে সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তা থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও বৈঠকে সুপারিশ করে কমিটি। দেশের মানুষের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর কমিটি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করে। এ ছাড়া বিগত রমজান মাসের মতো আগামী রমজানেও দ্রব্যমূল্য যেন স্থিতিশীল থাকে সে লক্ষ্যে এখনই ভোক্তা সাধারণের নিত্যপণ্যের (ডাল, তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর এবং পিঁয়াজ ইত্যাদি) চাহিদা পূরণের জন্য আগাম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।