মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্যানারির বর্জ্যে সর্বনাশ ধলেশ্বরীর

সাভার প্রতিনিধি

ট্যানারির বর্জ্যে সর্বনাশ ধলেশ্বরীর

সাভারে ধলেশ্বরী নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে উঠছে। স্থানীয়রা নদীতে নেমে মাছ সংগ্রহ করছে। এলাকাবাসীর ধারণা ট্যানারির দূষিত বর্জ্যরে কারণে মাছগুলো দুর্বল হয়ে নদীতে ভেসে উঠছে। এলাকাবাসী জানায়, সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত বিসিক শিল্প নগরী ট্যানারি। এখানে কারখানা রয়েছে দেড় শতাধিকেরও বেশি। ট্যানারির দূষিত পানি সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ছে। এ কারণে নদীর পানি দূষিত হওয়ায় গতকাল সকাল থেকে নদীর দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দুর্বল হয়ে ভেসে উঠেছে। মাছগুলো সংগ্রহ করার জন্য ভিড় করছেন নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ভেসে ওঠা মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- আইড়, নলা, পুঁটি, বাইম, রুই, কাতলা, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এলাকাবাসীর অভিযোগ ট্যানারি কারখানার দুর্গন্ধে এর আশপাশে বসবাস করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। বছর খানেক আগেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত ধলেশ্বরীতে। এখন এই নদীতে মাছের দেখাই পাওয়া যায় না। বিষক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে মাছ। ধলেশ্বরী নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা একাধিক জেলে বলেন এসব তথ্য। বিসিকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হেমায়েতপুরের ঝাউচর গ্রামের বাসিন্দা নবী হোসেন বলেন, একসময় কৃষিকাজ করলেও মাঝে মাঝে শখ করে ধলেশ্বরী নদীতে মাছ ধরতেন। তিনি জানান, বছর খানেক আগেও ধলেশ্বরীতে ধরা পড়ত আইড়, পাঙ্গাশ, বোয়াল, বড় বড় চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ। কিন্তু ট্যানারি চালু হওয়ার পর বর্জ্য পদার্থের বিষক্রিয়ায় এসব মাছ মরে যাচ্ছে। এখন আর ধলেশ্বরীতে তেমন পানি নেই, স্রোতও কম। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভরা থাকলেও শুকনো মৌসুমে পানি অনেকটাই কমে যায়। একদিকে বুড়িগঙ্গা, অন্যদিকে তুরাগ নদী মরে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ধলেশ্বরীতে। এদিকে ট্যানারির দুর্গন্ধে ওই এলাকার নানা বয়সী মানুষ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এ বিষয়ে ট্যানারি কর্তৃপক্ষ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি।

সাভার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধলেশ্বরী নদীর মাছ মরার কারণ হচ্ছে ট্যানারি কেমিক্যাল নদীতে ফেলা হচ্ছে যার কারণে মাছ মরে ভেসে যাচ্ছে। ‘নানা কারণে দেশের খাল-বিল-পুকুর-নদ-নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এসব জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া মাছ হারিয়ে যাওয়ার বড় কারণ। মৎস্য বিভাগ থেকে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে মাছ রক্ষার কাজ চলছে। গবেষণার মাধ্যমে এখন পাঙ্গাশ, পাবদা, টেংরা, শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন মাছের চাষ হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারে (সিইটিপি) তরল বর্জ্য শোধনের পর পরিশুদ্ধ পানি ধলেশ্বরীতে ফেলার কথা। কিন্তু সিইটিপি নির্মাণের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় নদীতে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি। আর এ কারণেই মাছশূন্য হয়ে যাচ্ছে নদীটি। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে নদীর পানি।

সর্বশেষ খবর