সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কয়েকটি উদ্যোগে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

-পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব

শামীম আহমেদ

কয়েকটি উদ্যোগে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

দূষণের কারণে ঢাকার বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে ওঠায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, বায়ুদূষণের কারণে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে বেড়ে উঠছে। অসংখ্য মানুষ শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য খরচ বাড়ছে। অথচ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেই রাতারাতি বায়ুদূষণ কমিয়ে আনা যায়। বিদ্যমান আইনেই তা সম্ভব। সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদফতরকে এ দায় নিতে হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা ছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর বায়ুদূষণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। জনগণের ভালোর জন্য যে প্রকল্প, তা যদি জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে লাভ কী? বেসরকারি নির্মাণ কাজগুলোতেও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নিয়ম না মেনে পর্যাপ্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা ছাড়া নির্মাণকাজ, যত্রতত্র উন্মুক্ত অবস্থায় নির্মাণ সামগ্রী রাখা ও পরিবহন, যানজট, মালার মতো রাজধানী ঘিরে থাকা ইটভাটা, বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় প্লাস্টিক পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি- বেসরকারি সব নির্মাণকাজ পরিবেশবান্ধব করে চালাতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করতে হবে। কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। কার্যাদেশ বাতিল করতে হবে। সরকারের যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় বা চলমান সময়ে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা ছাড়া করতে দেওয়া যাবে না। রাস্তার পাশে যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হচ্ছে। এগুলো সড়কে ছড়িয়ে পড়ে পড়ে বাতাসে মিশছে। রাস্তার পাশে নির্মাণ সামগ্রী রাখা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি যে কোনো নির্মাণ কাজ ঢেকে করতে বাধ্য করতে হবে। ঢাকার চারদিকে মালার মতো বিস্তৃত সব ইটের ভাটা বন্ধ করে দিতে হবে। সরকার বর্তমানে ইটভাটার বিকল্প ব্যবস্থাকে প্রণোদিত করছে। তার পরও এসব ইটভাটা থাকছে কেন? নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন অবশ্যই আবৃত অবস্থায় করতে হবে। এগুলো পরিবহনের সময় রাস্তায় পড়ে। পরে গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে উড়ে বাতাসে মেশে। শুকনো মৌসুমে অবশ্যই নগরীতে পানি ছিটানো জরুরি। সদরঘাটসহ রাজধানীর কিছু এলাকায় বেশ কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে যেখানে রাতে টায়ার-প্লাস্টিক পোড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই অবৈধ। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে নতুন আইনের প্রয়োজন নেই, বিদ্যমান আইনেই সম্ভব। শুধু আইন কার্যকর করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদফতরের মাধ্যমে এই কাজগুলো করতে হবে। এটা তাদের দায়। না পারলে জবাবদিহি করতে হবে। জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়ে কোনো উন্নয়নকাজ হতে পারে না।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গতকাল বেলা ১টা ১১ মিনিটের ঢাকায় বায়ু মানের সূচক ছিল ২৫১, যা প্রতিষ্ঠানটির বিবেচনায় খুবই অস্বাস্থ্যকর। বাতাসে স্বাভাবিক মানের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ছিল ক্ষতিকর কণা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর