সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অবশেষে কারারক্ষী নিয়োগ হচ্ছে মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির মাধ্যমে

একক ক্ষমতা খর্ব হলো কারা অধিদফতরের

আনিস রহমান

পুরনো নিয়ম ভেঙে এবারই প্রথম নতুন নিয়মে কারা আধিদফতরে নারী ও পুরুষ কারারক্ষী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতদিন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল কারা অধিদফতরের ২০০ বছর ধরে জেল কোডের দোহাই দিয়ে। নিয়োগ নীতিমালা না মেনে কারা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পুরুষ ও মহিলা কারারক্ষী নিয়োগের কাজ করে আসছিলেন। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারারক্ষী নিয়োগের ক্ষেত্রে কারা অধিদফতর বিভাগভিত্তিক তাদের পছন্দসই জেল সুপার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করত। এই কমিটিতে রাখা হতো একজন জেলার এবং একজন ডেপুটি জেলারকে। এদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিআইজি নিয়োগ কাজ সম্পাদন করতেন। যা ছিল আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

কারা অধিদফতরের চাকরিবিধিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হবেন সরকার বা সরকার কর্তৃক মনোনীত কোনো কর্মকর্তা। কিন্তু চাকরিবিধির এই বিষয়টি সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরই মন্ত্রী এবং সচিবের পরামর্শক্রমে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কারা অধিদফতরের এডিশনাল আইজিকে সভাপতি ও কারা অধিদফতরের এআইজি (প্রশাসন) সদস্য সচিব করে গঠন করা এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব পযমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন কর্মকর্তা, কারা অধিদফতরের এআইজি এডমিন এবং কারা অধিদফতরের একজন চিকিৎসক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই কমিটির বিষয়ে কারা অধিদফতর আপত্তি উত্থাপন করলে বিষয়টি সম্পর্কে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটি আইনসম্মত এবং এই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মতামত প্রদান করেন। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের বিষয়টি কারা অধিদফতরকে অবহিত করা হলে তারা গঠিত নিয়োগ কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে পূর্বের ন্যায় কারা অধিদফতরের নিজস্ব নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন। দ্বিতীয়বার বিষয়টি পুনরায় মতামতের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আগের মতামত বহাল রেখে সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়। এর পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ  কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে কারা অধিদফতরের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলো। এর মধ্য দিয়ে কারারক্ষী নিয়োগের ক্ষেত্রে কারা অধিদফতরের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এর মধ্য দিয়ে মূলত কারারক্ষী নিয়োগে দুর্নীতির যে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উঠে আসছিল তার রাস টানা যাবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসার সুযোগ তৈরি হবে।

সর্বশেষ খবর