বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পর্যটনশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ

-প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

পর্যটনশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, করোনাভাইরাসের রাহুগ্রাসে অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি সারা বিশ্বের পর্যটনশিল্পে ধস নেমেছে। আন্তর্জাতিক পর্যটক কমেছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটকও কমেছে। ধুঁকছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। কর্মহীন হয়েছেন পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষ। এখনো চাকরি ঝুঁকিতে আছে লাখো কর্মী। সংক্রমণ কমায় লকডাউন তুলে নেওয়ার পর বাংলাদেশের পর্যটন খাতটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। বর্তমান পর্যটনে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে একটা সঠিক রূপরেখা তৈরি করতে হবে। সরকারের সুদৃষ্টি ও সহায়তাই পারে এই শিল্পকে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে। এটি মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব পর্যটন সংস্থা নির্দেশিত দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। শীত পড়তেই ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এখন তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির হিসাবে করোনা সংক্রমণ পাটিগণিতের হিসাবে বাড়ে না, লাফিয়ে বাড়ে। অর্থাৎ প্রথম সপ্তাহে আট গুণ বাড়লে দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়বে ৪০ গুণ, তৃতীয় সপ্তাহে ৩০০ গুণ। এই বিষয়টি বুঝতে না পারলে আগামী কয়েক মাসে সমস্যা বাড়বে। করোনায় ভঙ্গুর অবস্থা কাটিয়ে এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি অর্থনীতি। এরই মধ্যে ফের লকডাউন ঘোষণা করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স। বন্ধ হয়ে  গেছে এসব দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। করোনার বড় প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতে। মহামারীটি ভ্রমণ বিধিনিষেধের পাশাপাশি ভ্রমণকারীদের মধ্যে চাহিদা হ্রাসের কারণে পর্যটনশিল্পে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা অনুমান করেছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন ২০-৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যার ফলে সম্ভাব্য লোকসান ৩০-৫০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। বিশ্বের অনেক শহরে পরিকল্পিত ভ্রমণ ৮০-৯০ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ১১০ কোটি পর্যটক কমে  যেতে পারে এবং ৯১০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি অবদান হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) তথ্যমতে, এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০-১২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পে উন্নতি চোখে পড়ার মতো। করোনাভাইরাসের রাহুগ্রাসে এ শিল্পে ধস নেমে এসেছে। সব ধরনের হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সার্বিক পর্যটনশিল্পে ৯ হাজার ৭০৫  কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জন কর্মী। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসাবে, প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক আগমনকারীদের সংখ্যা ৭০ শতাংশ হ্রাস  পেয়েছে চলতি বছরের আট মাসে। বিশ্বে করোনার প্রভাব কত দিন থাকবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অন্যান্য শিল্প হয়তো অদূর ভবিষ্যতে তাদের করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসবে; কিন্তু পর্যটনশিল্প এত দ্রুত পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি জারি করেছে, করোনার উপদ্রব আগামী দুই বছরও চলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সব স্বাস্থ্যরক্ষা বিধি মেনে আমাদের চেষ্টা করতে হবে পর্যটনশিল্পকে টিকিয়ে রাখর। যে কোনো সমস্যার সঠিক সমাধান ও মহামারী নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

সর্বশেষ খবর