বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাণিজ্যে টার্গেট ৭৮ বৈদেশিক মিশন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, বৈদেশিক মিশন গুলোর এখন বহুমুখী ভূমিকা রাখার সময়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের (সেকেন্ড ওয়েভ) নেতিবাচক প্রভাব থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষায় বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৮টি বৈদেশিক মিশনকে টার্গেট করেছে সরকার। লক্ষ্য নিয়েছে, এসব মিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রচার ও প্রসার চালানোর। পাশাপাশি যে দেশে যে পণ্যের চাহিদা বেশি, সেই দেশে সেই পণ্য রপ্তানি বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়ার। আর এই যোগসূত্র তৈরির কাজটি করবে বৈদেশিক মিশনগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে বৈদেশিক মিশনগুলোকে পণ্য রপ্তানির টার্গেট বেঁধে দেওয়া হতো। সময় সময় সেই টার্গেট পূরণ হয়েছে কি-না তা মূল্যায়ন করা হতো। তবে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্যে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে মিশনগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, বৈদেশিক মিশনগুলোর এখন বহুমুখী ভূমিকা রাখার সময়। প্রচলিত কার্যক্রমের পাশাপাশি তারা নিজ দেশের বেসরকারি খাতের শিল্প-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিদেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের সংযোগ তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে এটিই চাইছে সরকার।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও বৈদেশিক মিশনগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের এক সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেছেন, নতুন পণ্য ও বাজার অনুসন্ধান, পণ্যের বাজারজাতকরণ ও ব্র্যান্ডিং এর বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের ৪৫টি বৈদেশিক মিশন রয়েছে। এ ছাড়া উপ-মিশনও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। কেবল ভারতেই দিল্লির পাশাপাশি, কলকাতা ও আগরতলায় রয়েছে উপহাইকমিশন। যুক্তরাজ্যে লন্ডনের পাশাপাশি বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে রয়েছে আরও দুটি উপহাইকমিশন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনের পাশাপাশি নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে রয়েছে কনস্যুলেট জেনারেল। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও রয়েছে একাধিক মিশন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে অবস্থিত কিছু মিশনের কার্যক্রম আশানুরূপ হলেও বেশিরভাগ মিশন মন্ত্রণালয়ে কিছু প্রতিবেদন পাঠিয়ে সারা বছরের দায়িত্ব শেষ করে। এমন কি স্বল্পসংখ্যক মিশন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি টার্গেট পূরণ করতে পারলেও বেশিরভাগ মিশন এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। এ জন্য পিছিয়ে থাকা মিশনগুলোর কর্মদক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরাশিয়া অঞ্চলের মিশনগুলোকেও বাংলাদেশি পণ্য ব্র্যান্ড হিসেবে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, কভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি কর্মকৌশল জমা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই কর্মকৌশলে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুসারে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদেশি উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ তৈরি এবং সম্ভাবনাময় পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে প্রযুক্তি ও নীতি সহায়তা দেওয়া।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই কৌশল অনুসরণ করে বিদেশে অবস্থিত ৭৮টি বৈদেশিক মিশনকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারলে, করোনার সেকেন্ড ওয়েভেও রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব। সে লক্ষ্যে বৈদেশিক মিশনকে কাজে লাগিয়ে নতুনপণ্য ও বাজার অনুসন্ধান, পণ্যের বাজারজাতকরণ ও ব্র্যান্ডিং এবং বিশ্ব বাণিজ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তদেশীয় সংযোগকে গুরুত্ব দেওয়ার কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে গত সেপ্টেম্বরে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি কর্মকৌশল উপস্থাপন করেছিলাম। সে সময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী বৈদেশিক মিশনগুলোকে সক্রিয় করার বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। ড. জাফর উদ্দীন বলেন, আমাদের কিছু কৌশল রয়েছে, যেমন- অঞ্চলভিত্তিক পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে হালাল খাবারের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক ও হালাল খাদ্য রপ্তানি বাড়াতে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমদানিকারক দেশগুলোর উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এ কাজটি সমন্বয় করার জন্য বৈদেশিক মিশনগুলোতে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

সর্বশেষ খবর