বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
দেখার কেউ নেই

আখাউড়ার ২৫০ শহীদের গণকবরটি এখন জঙ্গল

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আখাউড়ার ২৫০ শহীদের গণকবরটি এখন জঙ্গল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সেনারবাদী গ্রামের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা দক্ষিণ রামনগর সীমান্তের  নোম্যান্সল্যান্ডে (সীমান্তের শূন্য রেখায়) ২৫০ শহীদের গণকবর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতার গণকবরটি সংস্কার করতে কেউ এগিয়ে আসেননি। বাংলাদেশের অংশে গণকবরের অবস্থান। তাই বিজয়ের মাসে দাবি উঠেছে গণকবরটি রক্ষণাবেক্ষণসহ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলার জিবি হাসপাতালে যেসব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের সেখানে দাফন করা  হতো। তাছাড়া পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদেরও সেখানে দাফন করা হয়। কোনো কবরে ৩-৪ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগেরই নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে দক্ষিণ দিকে সেনারবাদী এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ‘২০২১/আই-এস’ সীমান্ত টিলার কাছে জঙ্গলি গাছ ও লতাপাতায় বেষ্টিত প্রায় অর্ধ একর জায়গাজুড়ে গণকবরটির অবস্থান। সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যরে দক্ষিণ রামনগর গ্রাম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনারবাদী গ্রামটিতে পাকসেনারা সুদৃঢ় কোনো অবস্থান নিতে পারেনি। ফলে আখাউড়া, গঙ্গাসাগর, কর্নেল বাজার, গাজির বাজারসহ আশপাশের এলাকায় যে যুদ্ধ হয়েছে তাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সেনারবাদী কবরস্থানে কবর দেয়। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের লোকজনই এ কবরস্থানটিকে যৌথভাবে ব্যবহার করত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের লাশ দাফন করায় পরবর্তীকালে এলাকাবাসী এ কবরস্থানটিকে আর ব্যবহার করেননি। সেনারবাদী কবরস্থানের পাশে তখন একটি ইটের ভাটা ছিল ত্রিপুরার দক্ষিণে রামনগরে। ইটেরভাটার পাশ থেকে লাশগুলো তুলে এনে পাশাপাশি দুটি স্থানে কবর দেওয়া হয়। কবর দেওয়ার সময় আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউপির সাবেক মেম্বার মো. আবদুর রাজ্জাক নিজে অনেক মুক্তিযোদ্ধার লাশ সমাহিত করার কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, আড়াইশর বেশি লাশের দাফন হয়েছে ওই গণকবরে। লাশ দাফনের সময় সহায়তা করেছেন মৃত আজিজুল হক, আব্দু মেম্বার, আলী আহমেদ সরদার ও গিয়াস উদ্দিন ওরফে আরজু মিয়া। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরবর্তী সময়ে শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে সেনারবাদী গণকবর পরির্দশন করে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জন্য ১০ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওই গণকবরে শায়িত শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় আর কেউ এগিয়ে আসেননি। মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম খাদেম বলনে, আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের শূন্যরখোয় অবস্থিত সেনারবাদী গণকবরে আড়াই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শায়িত আছেন। বিগত সময়ে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর