শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গতিহারা বাম রাজনীতি

রুহুল আমিন রাসেল

গতিহারা বাম রাজনীতি

দেশের বামপন্থি দলগুলোতে সাংগঠনিক দুর্বলতা চরমে। ফলত তারা গতিহারা হয়ে পড়েছে। গ্রুপিং-কোন্দল আর অন্তঃকোন্দলের শেষ নেই। ফলে রাজনীতির মাঠে সরকারকে বড় কোনো ধাক্কা দিতে পারছে না বাম দলগুলো। আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিলেও, সেখানে মতভেদ চরমে। দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলগত পার্থকও কম নয়। ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনেও তাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাম জোট ছোট-বড় আন্দোলন করছে। দলগুলোর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলগত পার্থক্য আছে। এমনকি কোনো কোনো ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের টানাপোড়েন চলছে। ফলে মাহমুুদুর রহমান মান্না ও নুরুল হক নূরদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে কিছু বাম নেতার অংশগ্রহণ নিয়ে জোটের ভিতর ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়াও আছে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাম দলগুলোর কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সরকারকে বড় ধাক্কা দিতে পারছে না। তবে শাসক দলের জুলুম-অন্যায় ও অবিচারের কথা জনগণের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। এই যে পাটকলগুলো বন্ধ করার পর এখন চিনিকলগুলোও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার প্রতিবাদে মাঠে সরব রয়েছে একমাত্র বামপন্থিরাই। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের মতে, জনজীবনের প্রতিটি ইস্যুতে বামপন্থিরা সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে রাজপথে সোচ্চার ও সরব রয়েছে। তবে আমাদের সামর্থ্যরে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা টাকার রাজনীতি করি না। ফলে কর্মীরা নিজেদের সীমিত শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকেন। আছে সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতাও। এরপরও দুর্যোগ, নিত্যদিনের সংকট আর মহামারীতে মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সবার আগে এগিয়ে আসেন বামপন্থিরা। জানা গেছে, জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সরব বাম দলগুলো। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে বাম দলগুলোর সোচ্চার প্রতিবাদ দেখেছে সাধারণ মানুষ। পাটকল ও গার্মেন্টসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের দাবি আদায়েও মাঠে সক্রিয় দলগুলো। তবে দেশে অনেক বাম দল থাকলেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় কেবল কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ। জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে রাজপথে দেখা মিলছে বামদের। দেশের বাম দলগুলোর একটি অংশ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে সংসদে আছে। আর অধিকাংশ বাম দলই নিষ্ক্রিয়। যদিও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গত কয়েক বছর যাবত বাম জোট রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনেও জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় বাম দলগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে সক্রিয় বাম জোট।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বি-দলীয় বৃত্তের রাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এই জোটে থাকা ৮টি দলের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লিগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। গত বছর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে একটা অংশ বেরিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী) নামে নতুন দল করে। এই দলটিও বাম জোটে যুক্ত হয়। জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে কেবল কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর এই জোটের শরিক কোনো দল থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির পাঁচজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর