খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও শীতঘুম ভাঙেনি সরকারের বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তাদের। চলতি অর্থবছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ আদায়ের লক্ষ্য বেঁধে দিয়ে গত জুলাইয়ে দেশের প্রতিটি শাখায় চিঠি পাঠানো হয়। অঞ্চলপ্রধান, শাখা ব্যবস্থাপক, মাঠকর্মীদের নিয়মিত গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেই চিঠিতে। এখন প্রথম প্রান্তিক শেষে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যাশিত ঋণ আদায় দূরের কথা, বরং গত অর্থবছরের চেয়েও ১০৭ কোটি টাকা আদায় কম হয়েছে।
ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে ২১৯ কোটি টাকা শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার পর এই আদায়ের পরিমাণ মাত্র ১১২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ১৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণ আদায় কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকটির ঢাকা জোনে ১৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১ শতাংশ এবং কুষ্টিয়া জোনে প্রায় ১৪ শতাংশ হারে ঋণ আদায় কম হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গত ৩ নভেম্বর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ঋণ আদায় বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আপনাদের বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায়ের হার অত্যন্ত হতাশাজনক ও অগ্রহণযোগ্য। প্রতীয়মান হচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের পরামর্শ, নির্দেশনা পালনে আপনারা মোটেও আন্তরিক নন। ব্যাংকটির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নিয়মিতভাবে আপনাদের কার্যক্রম মনিটরিং করছে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ঋণ আদায়ের ব্যর্থতার দায় আপনাদেরই বহন করতে হবে।সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষি খাতে ঋণপ্রবাহ জোরদার করতে বিশেষ আইনে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। কিন্তু চার দশকের বেশি সময় পেরিয়ে ব্যাংকটি মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছে। কৃষি ও ক্ষুদ্র খাতের পরিবর্তে অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে বেশি ঋণ বিতরণ করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, প্রান্তিক কৃষক ঋণের জন্য মাসের পর মাস শাখাগুলোতে ধরনা দিলেও তাদের ঋণ দেওয়া হয় না। কমিশন নিয়ে কৃষি খাতের জন্য বরাদ্দ ঋণ দেওয়া হয় বাণিজ্যিক খাতে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ ঋণ অনাদায়ী হয়ে খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। আবার কমিশন নিয়ে ঋণ দেওয়ার কারণে ওই ঋণ আদায়ে কঠোর হতে পারেন না মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এর আগে কৃষি ব্যাংক ও রাকাবের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছিল, আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে আসায় তাদের বিতরণ করা ঋণ সঠিক সময়ে আদায় হচ্ছে না। আদায় কম থাকায় খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি, লোকসানে পতিত হওয়াসহ নানা সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদও কমে যাচ্ছে। অথচ কৃষি ঋণ বিতরণকারী অন্য ব্যাংক এবং গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা প্রভৃতি এনজিওর ঋণের আদায় বেশ ভালো। এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামানকে ফোন দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংকটির এমডি আলী হোসেন প্রধানীয়াকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।