রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের চার নীতিতে ফিরে আসা চ্যালেঞ্জ

-শারমিন মুরশিদ

মুক্তিযুদ্ধের চার নীতিতে ফিরে আসা চ্যালেঞ্জ

গণতন্ত্র ফিরে পাওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রে ফিরে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রের জায়গায় আমাদের পা দিতে হবে। ২০২১ সালে অনেক স্থানীয় সরকার নির্বাচন আছে। আমাদের নির্দলীয় স্থানীয় সরকারের (নির্বাচনের) চর্চায় ফিরে আসতে হবে। আর তা করলেই ওই যে চার স্তম্ভের এক স্তম্ভ গণতন্ত্র। তবেই তৃণমূলে গণতন্ত্রের বীজ বোনা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি থেকে পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেই জায়গায় ফিরে যাওয়া।

নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়ের বিষয়ে আলাপকালে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। এ সময় আগামী বছরের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন।

শারমিন মুরশিদ বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। তা নিয়ে আমরা কম কথা বলছি। এ ছাড়াও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা ৫০ বছরে পা দিতে যাচ্ছি। কিন্তু একটা জিনিস আমাদের সবাইকে ভাবাচ্ছে। দেশটাকে নিয়ে আমরা কী করলাম। আমরা কী পেলাম? কী পেলাম না?

এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, আমরা যে মূল চার নীতি নিয়ে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আমরা সেই জায়গা থেকে একদম পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো, আমরা সেই পথে কীভাবে ফিরে আসব। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি থেকে পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেই জায়গায় ফিরে যাওয়া। আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়া। সমাজতান্ত্রিক বোধগুলোকে ফিরে পাওয়া। দেশপ্রেম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা।

তিনি বলেন, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সেই পথকে ফিরে পাওয়াটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং তা আমাদের করতে হবে। কেননা সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশ যাত্রা শুরু করেছিল।

উত্তরণের উপায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, উত্তরণ ঘটাতে হলে প্রথমত, সরকারকে এবং দেশের মানুষকে এটা মানতে হবে যে, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। পথভ্রষ্ট হয়েছি। উত্তরণের প্রথম ধাপ হচ্ছে স্বীকার করা। আমরা যদি স্বীকার করি, তখনই আমরা কিন্তু ফিরে আসার উদ্যোগ নেব। যদি স্বীকার না করি, তবে ফিরে আসব কীভাবে? দ্বিতীয়ত, সরকারের অন্তর্মুখী হওয়া উচিত। আত্মবিশ্লেষণমুখী হওয়া উচিত। আমাদের রাজনৈতিক কালচারে আত্মবিশ্লেষণ নেই। তৃতীয়ত হলো-সিদ্ধান্ত নেওয়া। যে এই চার নী আমরা ফিরিয়ে আনব। এটা এই সরকারকে করতে হবে। কেননা এই সরকার বঙ্গবন্ধুর সরকার। আর ওই চার নীতি বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছিলেন দেশের অগ্রগতির জন্য। সরকারকে এটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং স্পষ্ট বলতে হবে যে, আমরা ওই চার নীতিতে ফিরে আসব। 

তিনি বলেন, নির্বাচনের যে অবক্ষয়টা ঘটে গেছে। সেখান থেকে সরে এসে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা ভাবতে হবে। যে নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলাম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও আমরা ক্ষমতায় যেতে পারিনি। মনে রাখতে হবে ওই অভিজ্ঞতাটা। এই দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করতে পারে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জায়গায় আমাদের পা দিতে হবে। ২০২১ সালে অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন আছে। আমাদের নির্দলীয় স্থানীয় সরকারের (নির্বাচনের) চর্চায় ফিরে আসতে হবে। তবে সরকার কীভাবে করবে তা জানি না। কিন্তু সেটা করতে হবে। আর সেটা করলেই ওই যে চার স্তম্ভের এক স্তম্ভ গণতন্ত্র। তবেই তৃণমূলে গণতন্ত্রের বীজ বোনা হবে। তৃণমূলে গণতন্ত্রের বীজ আমাদের সরকার বুনছে না।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হলে আমাদের গণতন্ত্র দাঁড়াবে না এবং আমরা যে পথভ্রষ্ট হচ্ছি। তখন আরও পথ হারা হব। সে কারণে সরকারকে ঘোষণা দিয়ে সরে আসতে হবে এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে। ফিরে এসে আবার একটা নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চর্চায় আসতে হবে। তবে সরকার করবে কি না। পারবে কি না। আমি জানি না। কিন্তু এটা দাবি রাখে। সুষ্ঠু-সুস্থ একটি গণতান্ত্রিক প্রথা আবার নতুন করে চালু করার জন্য হলেও এটা শুরু করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি। এই সরকার হলো বঙ্গবন্ধুর সরকার। বঙ্গবন্ধুর দলের সরকার। এই সরকারকে সেই চর্চায় আগে ফিরে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধু একটি ন্যায়বিচারের সমাজের কথা বলেছিলেন। একটা সমবণ্টনের সমাজের কথা বলেছিলেন। আর সেই জায়গায় ফিরতে হলে দ্বিতীয় আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতি। আমরা যদি দুর্নীতিমুক্ত না হই, তবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে পারব না। আমাদের মৌলিক জায়গা হচ্ছে গণতন্ত্র এবং সুশাসন তথা দুর্নীতিমুক্ত। আর দুর্নীতিমুক্ত করলেই আমাদের শাসন ব্যবস্থা ইমপ্রুভ করবে। ন্যায়বণ্টন তৈরি হওয়ার শুরু করবে। কেননা দুর্নীতির কারণে আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি অন্যায় হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর