শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বাজেট ঘাটতি ছাড়াবে ২ লাখ কোটি টাকা

করোনার নেতিবাচক প্রভাব, চাপ বাড়বে ব্যাংক খাতে

মানিক মুনতাসির

বাজেট ঘাটতি ছাড়াবে ২ লাখ কোটি টাকা

মহামারী করোনাভাইরাসের কবলে সরকারের আয় কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। ফলে বাড়বে বাজেট ঘাটতি। শুধু তাই নয় এর রেশ থাকবে পরবর্তী ২০২১-২২ বাজেটেও। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য বরাবরের মতো ব্যাংক খাতে নির্ভর করবে সরকার। কেননা বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কমবে বৈদেশিক সহায়তা। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই নির্ভর করতে হবে। যার সিংহভাগই নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। ফলে এবার অন্যবারের তুলনায় একটু বেশিই চাপে থাকবে ব্যাংক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, করোনার প্রথম ঢেউ যেতে না যেতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবারও টালমাটাল অর্থনীতি। ফলে সরকারকে আবারও ব্যয়ের ফর্দ ভারী করতে হচ্ছে। এতে নতুন অর্থবছরের বাজেটে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঘাটতির রেকর্ড হতে যাচ্ছে। সেই   সঙ্গে ভাঙবে ‘গোল্ডেন ফাইভ রুলস’। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি বাজেটের প্রাক্কলন করেছে। স্বাধীনতার পর কখনোই এত বেশি ঘাটতি বাজেট পরিকল্পনা করা হয়নি। ঘাটতি অর্থায়নে নতুন অর্থবছরেও সরকারের মূল ভরসা হতে যাচ্ছে ব্যাংক খাত।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। আবার রাজস্ব আয়ও কাক্সিক্ষত হয় না। ফলে ঘাটতি বাজেট দিতে হয়। আর ঘাটতি অর্থায়নে যেসব রাস্তা রয়েছে সেগুলোও সীমিত। তিনি বলেন, ঘাটতি অর্থায়নে দেশীয় ও বিদেশি উৎস ভরসা। বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন করলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের প্রবাহ ঠিক থাকে। আর দেশীয় মানেই ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র। ব্যাংক থেকে অনেক বেশি অর্থ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

সূত্রমতে, বাজেটের পুরোটাই ব্যয়। এই ব্যয় এবং আয়ের মাঝে যে টাকাটা থাকে তা-ই ঘাটতি। ঘাটতি অর্থায়নে সরকার দুই উৎসের ওপর নির্ভর করে। অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র এবং অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়। ঘাটতি বাজেট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবসময় ‘গোল্ডেন ৫ রুলস’ অনুসরণ করা হয়। এই রুলস বা নিয়ম মতে, ঘাটতি বাজেট সবসময় জিডিপি’র ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়। করোনার কারণে চলতি অর্থবছর এ নিয়ম ভাঙা হয়। নতুন বাজেটেও ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আগামী বাজেটে এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। নতুন বাজেটে অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতির পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বাড়ছে।

অভ্যন্তরীণ উৎস : বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকছে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর। আগামী অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটি জিডিপির ৩.৪৬ শতাংশ। চলতি বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে নতুন বাজেটে ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা বাড়ছে। নতুন বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ২.৬ শতাংশ। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ খাতে সরকারের মূল ভরসা ব্যাংক খাত। বাকি ৩০ হাজার কোটি টাকা আসবে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে।

বিদেশি উৎস : আগামী বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে সরকার ৮৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহে সরকার বিদেশি উৎস থেকে সহজ শর্তে ঋণ সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে।

এক নজরে কয়েক বছরের ঘাটতি বাজেট : ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ওই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটের বিপরীতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ঘাটতি ছিল ৬৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ওই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের জিডিপির ৫ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে অর্থবছরটিতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের জিডিপির ৫ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর