বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবনে ভালো নেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবি চিত্রল হরিণ। এই দুই বন্যপ্রাণী এখন চোরা শিকারি ও পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বাঘ ও হরিণ শিকার। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বন থেকে শিকার করা একটি বাঘের চামড়া, ১৯টি হরিণের চামড়া, ১৬ কেজি হরিণের মাংসসহ ৮ চোরা শিকারি ও বন্যপ্রাণীর চামড়া পাচারকারী গ্রেফতার হয়েছে। সুন্দবন বিভাগ, র্যার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সার্বক্ষণিক সুন্দরবন পাহারায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং চালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না বাঘ, হরিণ শিকারি, বন্যপ্রাণীর চামড়া ও মাংস পাচার। নেপথ্যে গডফাদার বা প্রভাবশালী চক্র থাকায় চোরা শিকারি ও বন্যপ্রাণীর চামড়া পাচার থামানো যাচ্ছে না। এদিকে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দবন বিভাগ ও র্যার- ৮ সদস্যরা গত ১৯ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ক্রেতা সেজে একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘের চামড়াসহ মো. গাউস ফকির (৪০) নামে পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। তিনি শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের রশিদ ফকিরের ছেলে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেশ করেয় মাস আগে এই বাঘটিকে সুন্দরবন থেকে চোরা শিকারিরা হত্যা করে লবণ দিয়ে পলিথিনের বস্তায় ভরে রেখেছিল। উদ্ধার হওয়া ৮ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ও ৩ ফুট ১ ইঞ্চি চওড়া পূর্ণ বয়স্ক বাঘের চামড়াটি তিনি শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের অহিদুল নামে এক চোরা শিকারির কাছ থেকে পাচারের জন্য কিনে রেখেছিলেন বলে জানায়। বন আইনে গ্রেফতার বাঘের চামড়া পাচারকারী গাউস ফকির বর্তমানে বাগেরহাট কারাগারে আটক থাকলেও এখনো আটক হয়নি বাঘ হত্যাকারী চোর শিকারি অহিদুল। এদিকে বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে গত ২০১৯ সালের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে বর্তমানে বাঘ রয়েছে মাত্র ১১৪টি। আর হরিণ রয়েছে এক থেকে দেড় লাখ। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বন বিভাগের হিসেবে ৫৪টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১৫টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়া ১৪টি বাঘকে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকি ২৬ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারিরা। জানা গেছে, অধিক মুনাফার আশায় হরিণের মাংসসহ চামড়া, বাঘের অঙ্গ-প্রতঙ্গ, চামড়া, হাড়, দাঁত, নখ পাচার এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটি দেশ ও দেশের বাইরে চীন-লাওস-থাইল্যান্ড সীমান্তে বন্যপ্রাণী ও চামড়াসহ অঙ্গ-প্রতঙ্গের আন্তর্জাতিক চোরাই বাজার ‘গোল্ডেন ট্রাংগল’-এ চলে যায় চোরকারবারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বনদস্যু মুক্ত ঘোষণার পর বাঘ ও হরিণ নিধন কমে এসেছে বলে বনবিভাগ দাবি করলেও মাত্র এক সপ্তাহে একটি বাঘের চামড়া, ১৯টি হরিণের চামড়া, ১৬ কেজি হরিণের মাংসসহ আটজন চোরা শিকারি ও বন্যপ্রাণীর চামড়া পাচারকারীকে গ্রেফতারে উঠে এসেছে সুন্দরবনের উদ্বেগজনক চিত্র। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বর্তমানে সার্বক্ষণিক সুন্দরবন পাহারায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিং চালানো হচ্ছে। সুন্দরবনের চোরা শিকারি ও বন্যপ্রাণীর চামড়া পাচারকারী সিন্ডিকেট বা তাদের পিছনে থাকা গডফাদাররাও নজরদারির মধ্যে রয়েছে।