একসময় গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক টাকা ব্যয়ে মাটির দোতলা বাড়ি তৈরি করতেন। তবে ইট, বালি ও সিমেন্টের যুগে বর্তমানে মাটির বাড়ি প্রায় বিলীনের পথে। তবে, এখনো উচ্ছল নওগাঁর মহাদেবপুরের আলিপুর গ্রামের মাটির তৈরি বাড়িটি। এটি এলাকাবাসীর কাছে ‘নওগাঁর মাটির রাজপ্রাসাদ’ নামে পরিচিত। জানা গেছে, নওগাঁ-মহাদেবপুর আঞ্চলিক সড়কের তেরমাইল মোড় থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গেলেই নজর কাড়বে বিশাল রং করা কালো বাড়িটি। ১৯৮৬ সালে তিন বিঘা জমির ওপর মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় ১০৮ কক্ষের বাড়িটি। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ও প্রস্থ ১০০ ফুট। বাড়ির ছাউনির জন্য টিন লেগেছিল ২০০ বান্ডিল। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা রাজপ্রাসাদের মতো। বিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেছেন সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল নামের দুই ভাই। আলিপুর গ্রামের বৃদ্ধ আসমত আলী বলেন, মাটি ও খড় পানিতে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেওয়াল তৈরি করা হয়। একসঙ্গে মাটির দেয়াল বেশি উঁচু করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করতে হয়। কয়েক দিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার ওপর দেয়াল তৈরি করেন কারিগররা। এভাবে ২০ থেকে ২২ ফুট উঁচু দোতলা বাড়িটি নির্মিত হয়েছে। ওই গ্রামের আরেক বৃদ্ধ লয়খত আলী বলেন, বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মাটির দোতলা বাড়ি তৈরি করতে ৯ মাস সময় লাগে। তবে এটি সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। বাড়িসহ আশপাশে মোট ২১ বিঘা জমি রয়েছে দুই ভাইয়ের। আর বাড়িটি তৈরির মাটির জন্য বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছে। পত্নীতলার আমন্তঝুকি গ্রামের মিজানুর রহমান, আফসার আলী ও মান্দা নিচকুলিহার গ্রামের শিক্ষক মহসিন আলী বলেন, এতবড় মাটির তৈরি বাড়ি জেলার কোথাও তারা দেখেননি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সেই সময় খুব যত্ন করে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। সংরক্ষণ করা গেলে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠতে পারে ‘রাজপ্রসাদটি’। সমশের আলী মন্ডলের স্ত্রী ফাতেমা বেওয়া বলেন, পায়ে হেঁটে একবার বাড়ির চার ধার চক্কর দিতে সময় লাগে ৬-৮ মিনিট। ১০৮ কক্ষের এই বিশাল বাড়িতে প্রবেশের দরজা সাতটি। তবে প্রতিটি কক্ষে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় উঠার সিঁড়ি রয়েছে ১৮টি। তবে যে কোনো একটি দরজা দিয়েই যাওয়া যাবে ১০৮ কক্ষে। ৯৬টি বড় ও ১২টি ছোট কক্ষের বাড়িটিতে ছোট-বড় সবাই মিলে ৪০ জন বসবাস করেন। বাড়ি তৈরি করতে শতাধিক কারিগর কাজ করেছেন। আর বাড়িটি তৈরি করতে যে পরিমাণ মাটি লেগেছে তার জন্য বিশাল আকারের পুকুর হয়েছে। তাহের আলী মন্ডলের ছেলে মাসুদ রানা বলেন, এটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বহন করছে। মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমার জানামতে দেশের কোথাও ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি নেই। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বাড়িটি দেখতে জনসমাগম ঘটে। দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য ইতিমধ্যেই বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।