শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ষাটোর্ধ্বদের আগ্রহ বেশি টিকায়

এক দিনে নিলেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন, মোট নিবন্ধন ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭১

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মঞ্জুশ্রী রায় চৌধুরীর বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্ত তিনি। বয়সের কারণে করোনার সময় সতর্কতার সঙ্গে তাকে দেখাশোনা করেছেন ছেলেমেয়েরা। দেশে গণটিকাদান শুরু হতেই নিবন্ধন করে মেয়ের সঙ্গে টিকা নিতে এসেছিলেন তিনি। গতকাল রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে টিকা নিয়েছেন তিনি।

মঞ্জুশ্রী রায় চৌধুরীর মেয়ে রত্না সেন বলেন, করোনার সময়ে আমার ভাইয়ের পরিবার ও আমার পরিবার মাকে সতর্কতার সঙ্গে রাখতাম। প্রয়োজনে বাসা থেকে বের তো হওয়া লাগতই। অনেক বয়স্ক মানুষকে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে ভুগতে দেখেছি। কিন্তু মা বরাবরই মানসিকভাবে শক্তিশালী। দেশে টিকা আসার পরে মা টিকা নিতে আগ্রহ দেখায়। এরপর আমরা নিবন্ধন করে আজকে টিকা দেওয়াতে এনেছি। মঞ্জুশ্রী রায় চৌধুরীর মতো অনেক বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা আগ্রহী হচ্ছেন টিকা নিতে। গতকাল তিনটি টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ বেশি। গণটিকাদান শুরুর পর টিকায় আশ্বস্ত হচ্ছে মানুষ, বাড়ছে ভিড় টিকা কেন্দ্রগুলোতে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নিবন্ধন শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭১ জন। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ জন। গতকাল টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন। রাজধানীতে টিকা নিয়েছেন ৩২ হাজার ৪১২ জন। ঢাকা বিভাগে ৭৩ হাজার ৫১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ হাজার ৯০১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪ হাজার ৭৮৮ জন, রাজশাহীতে ৩২ হাজার ২২৪ জন, রংপুরে ২৫ হাজার ৫৭৯ জন, খুলনায় ৩৪ হাজার ১৯৫ জন, বরিশালে ১৪ হাজার ৪৪৪ জন, সিলেটে ১৫ হাজার ৩০০ জন টিকা নিয়েছেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে টিকা নিচ্ছেন মানুষ। আগে থেকে নিবন্ধন করা ফরম হাতে এসেছেন সবাই। টিকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন অনেকে। অপেক্ষারত ৩০ জন টিকা গ্রহীতার মধ্যে ১৮ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এর মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র তিন-পাঁচজন। হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সুশৃঙ্খলভাবে চলছে টিকা দান। টিকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ৬৮ বছর বয়সী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মীর মাহবুব আলী। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর সকালে হাঁটা বন্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত জীবনযাপনে বাধা পড়ে। এ পরিস্থিতিতে বাড়তে থাকে ডায়াবেটিসের মাত্রা। উপায় না পেয়ে করোনা ভয় নিয়েই হাঁটতে বের হচ্ছিলাম। দেশে টিকাদান শুরু হলেই নিবন্ধন করি। এসএমএস করে টিকা কেন্দ্র ও তারিখ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী এসে টিকা নিলাম। আমাদের বয়সী মানুষের ভিড় বেশি দেখলাম টিকা কেন্দ্রে। করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম সহজ করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যা আজ থেকে ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ‘সুরক্ষা কভিড-১৯ টিকা প্রদান অ্যাপ’ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ চালু হওয়ায় টিকাদান কার্যক্রম আরও সহজ হবে। এটা আরও গতি পেল। করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সুরক্ষা নামে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে সরকার। এখন টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করবেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। বাকি টিকা আসবে আগামী মাসে। নতুন চালু হওয়া সুরক্ষা অ্যাপটি শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড করা যাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, অ্যাপ চালু হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের এখন কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে না। তারা এখন টিকা কার্ডের কিউআর কোড স্ক্যান করবেন। তিনি বলেন, এতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেন্ট্রাল ডেটাবেইজে সংরক্ষিত টিকাগ্রহীতার তথ্য যাচাই ও আপলোড হয়ে যাবে।

 উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর