স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি সম্প্রতি এই সুপারিশ করেছে। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় সাফল্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি প্রতিবেদনে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে ‘বুল কেস’ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।
এতে আরও বলা হয়েছে, স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত এ দেশটি ছিল স্বল্পোন্নত। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে যে সফল উন্নয়ন মডেল দেখা গেছে, বাংলাদেশ তাদের খুব কাছাকাছি। অনেক দেশ খুব কম আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে রপ্তানিমুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য। এটাকেই আধুনিক সময়ে উত্তম রেকর্ড হিসেবে দেখা হয়। গত এক দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি ডলারের হিসাবে উন্নীত হয়েছে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগে। এর চালিকাশক্তি হিসেবে রয়েছে ক্রমবিকাশমান গার্মেন্ট শিল্প। যখন ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানি প্রকৃতপক্ষে কমে গেছে, তখন বাংলাদেশের রপ্তানিতে তা হয়নি। সম্প্রতি ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু জাতীয় প্রবৃদ্ধি মার্কিন ডলারের হিসাবে ভারতের প্রবৃদ্ধির শতকরা ৪০ ভাগ নিচে। এর কারণ, গত বছর ভারতে করোনা মহামারী। তবে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আশা করে, এই ফারাক কমবেশি হতে পারে।
এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেলে আরও কিছু ফ্যাক্টর আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো এখানকার জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ-যুবক। মজুরির দিক দিয়ে প্রতিযোগিতা অব্যাহত আছে এখানে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য স্থানের তুলনায় এখানে আছে শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান নারী শ্রমিক। তারা অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করছেন। তা সত্ত্বেও কিছু অর্থপূর্ণ বাধা রয়েছে। এক হলো, ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার চেয়ে বাংলাদেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম। গত ১০ বছরে ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে তিনগুণ এবং দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ২০০০-এর দশকে ভারতের রপ্তানি ফুলেফেঁপে ওঠে। তারপরই স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে ভারতের অর্থনীতির যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তা নিশ্চিত হয়নি।বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে উচ্চমূল্যের ম্যানুফ্যাকচারিং এবং তা রপ্তানির দিকে অগ্রসর হওয়া, যেমনটা করছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্প এখনো ব্যাপকভাবে গার্মেন্ট শিল্পভিত্তিক। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গ্রোথ ল্যাব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জটিলতার (কমপ্লেক্সিটি) দিক দিয়ে ১৩৩টি দেশের মধ্যে ১০৮ নম্বরে রেখেছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ যে অবস্থানে ছিল এই অবস্থান বাস্তবে তার নিচে।
এশিয়ার বড় বড় বাণিজ্যিক ব্লকের বাইরে ভারতের মতো নিজেকে দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ দেশটি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)-এর সদস্য নয়। অথবা রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপেরও সদস্য নয়। কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপেরও সদস্য নয়। বাংলাদেশকে তার উৎপাদন রপ্তানি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন আন্তঃএশিয়ান সরবরাহ চেইনের সঙ্গে বৃহত্তর অংশগ্রহণ। একই সঙ্গে এটা করতে তাকে তার পূর্বদিকের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।