দিনাজপুরে মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে লিচুর বাগান। চারদিকে ম-ম গন্ধ। মৌমাছিরা এ-গাছ থেকে ও-গাছে সংগ্রহ করছে মধু। আর মৌচাষিরা সুস্বাদু, মিষ্টি ও লোভনীয় এ মধু আহরণ করে চলেছেন। সব মিলে এখন বাগানি ও মৌচাষিদের কর্মব্যস্ত সময়। সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের খামার ঝাড়বাড়ি এলাকার লিচু বাগানে ১০০ মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন মোসাদ্দেক হোসেন। এ মাসেই তিনি প্রায় ৩ টন মধু পাবেন বলে আশা করছেন। মাস্টার্স পরীক্ষা?শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে মৌ-খামার গড়ে মধু উৎপাদনে দারুণ সফল মোসাদ্দেক হোসেন। অল্প সময়েই তিনি হতে পেরেছেন স্বাবলম্বী। মোসাদ্দেক হোসেন জানান, কাঠের বাক্সে তিন ধরনের মৌমাছি থাকে। রানী, পুরুষ আর শ্রমিক মৌমাছি। ২-৩ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে রানী। পুরুষ মৌমাছিরা বাঁচে দেড় মাস। শ্রমিকরা বাঁচে এক মাস। পুরুষ মৌমাছির হুল নেই এবং সবচেয়ে অলস। এরা শুধু প্রজননে অংশ নেয়। মৌচাকের সবচেয়ে কার্যক্ষম হলো শ্রমিক মাছি। চাক তৈরি, মৌচাক পরিষ্কার, মৌ শিশুর লালন, রানী তৈরি, রানীর জন্য বিশেষায়িত রয়াল নামক জেলি উৎপাদন, খাবার সংগ্রহ, নিরাপত্তার মতো কাজগুলো শ্রমিক মৌমাছিরাই করে থাকে। কাঠের বাক্সে ৮ থেকে ১০টি মৌচাক থাকে। প্রতি চাকে রানীর সংখ্যা একটি। নতুন রানীর সৃষ্টি হলে চাক পৃথক হয়ে যায়। ষড়ভুজাকার মৌ ঘরগুলো করা হয়। মধু উৎপাদিত হয় উপরে, নিচের দিকে বাচ্চা তৈরির জন্য রানী ডিম পাড়ে। তিনি আরও জানান, লিচু বাগানে ১০০টি মৌ-বাক্স রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে বাক্স থেকে মধু আহরণ করা হয়। মৌসুমে একটি বাক্সসহ বিভিন্ন খরচ হয় মোট ৩ হাজার টাকা। এরপরও কেউ আন্তরিকতা, ধৈর্য্য নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করলে লাভ হবেই। লোকসান হবে না। লিচুর মুকুল ছাড়াও সরিষা, কালোজিরা, ধনিয়া, লিচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, শজিনা, কেওড়া, গেওয়া, ধঞ্চা থেকেও উৎপাদিত হয় মধু। মোসাদ্দেক হোসেনের অভিমত, মধু চাষ লাভজনক। এর মাধ্যমে দেশ থেকে বেকার সমস্যা দূর করা যেতে পারে। এটি একটি ভাসমান প্রক্রিয়া। ভাসমান ব্যবস্থা, তাই ঋণ দেয় না কোনো ব্যাংক। ফলে অনেক বেকার ঋণ ব্যতীত মধু চাষে সাফল্যের মুখ দেখতে পান না। অথচ সরকারিভাবে আধুনিক প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা, মৌমাছির রোগবালাই দমনে সঠিক নির্দেশনা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে দেশে মধু চাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। বিশ্ববাজারে মধুর প্রচুর চাহিদা থাকায় রপ্তানি করে দেশ অর্জন করবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।