শিরোনাম
শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশেই আরেক মালদ্বীপ চর কুকরি- মুকরি

দৃষ্টি কাড়ে তাড়ুয়া ও নারিকেলবাগানের সৌন্দর্য আছে জিপ ট্রাকিং স্পাইডার ট্রাকিং, তাঁবু ও হোম-স্টের ব্যবস্থা

জিন্নাতুন নূর, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে ফিরে

দেশেই আরেক মালদ্বীপ চর কুকরি- মুকরি

বাংলাদেশের ভোলা জেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত কুকরি-মুকরি হচ্ছে একটি দ্বীপ (চর)। এই দ্বীপের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের। মালদ্বীপে যেমন এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে জলযানের প্রয়োজন হয় একইভাবে কুকরি-মুকরি দ্বীপের আশপাশে জেগে ওঠা দ্বীপ বা চরগুলোতে যেতে হলে প্রয়োজন স্পিড বোট, ছোট নৌকা ও ট্রলারের। স্থানীয়রা একে ‘দ্বীপকন্যা’ নামেও ডাকেন। সুন্দর এই দ্বীপটি এরই মধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। গতানুগতিক সমুদ্র দেখে যারা বিরক্ত এবং যারা খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ একটি রাত কাটাতে আগ্রহী তাদের জন্য আদর্শ স্থান কুকরি-মুকরি। সম্প্রতি দ্বীপ উপজেলা চরফ্যাশন সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পর্যটক টানতে সরকারি-বেসরকারিভাবে চর কুকরি-মুকরিতে নানা সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কাম রেস্ট হাউস। এ ছাড়াও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর বেশ কিছু প্রকল্পের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে কয়েকটি হোম-স্টে গড়ে তোলা হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চর কুকরি-মুকরিতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বেসরকারিভাবে ঝিকঝ্যাক ওয়াকওয়ে, জিপ ট্রাকিং, স্পাইডার ট্রাকিং ও ঝুলন্ত ব্রিজেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল ভূখ- থেকে পুরো চর ঘুরে বেড়ানোর জন্য সরকারিভাবে বনের মধ্য দিয়ে সুন্দর একটি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

ভোলা জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫০ কি.মি. দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা চরটির নামই চর কুকরি-মুকরি। এই ইউনিয়নটি বাবুগঞ্জ, নবীনগর, রসুলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিমপাড়া, চর পাতিলা ও শরীফপাড়া নিয়ে গঠিত। তবে কুকরি-মুকরিতে আসা পর্যটকদের কাছে এর আশপাশে থাকা বেশ কয়েকটি দ্বীপই এখন আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এরকমই একটি দ্বীপ হচ্ছে ভার্জিন বিচ তাড়ুয়া। এখানে যতদূর চোখ যায় দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে তাড়ুয়ার বুকে। এরই মধ্যে লাল কাঁকড়ার দল ছোটাছুটি করে বেড়ায়। সৈকতের পাড় ঘেঁষে চোখে পড়ে ম্যানগ্রোভের সারি। সামান্য দূরে মহিষের পাল দল বেঁধে ঘাষ খাওয়ায় মগ্ন। পর্যটকরা চাইলে এখানে তাঁবু খাটিয়েও থাকতে পারবেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান স্থানীয়রা। অন্য দ্বীপ থেকে তাড়ুয়ায় আসার সুবিধার্থে পিকেএসএফ-এর ‘চর কুকরি-মুকরিতে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন উপ-প্রকল্পের আওতায় সুন্দর একটি বাঁশের জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাড়ুয়া ছাড়াও চর কুকরি-মুকরিতে আসা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি পর্যটক স্পট হচ্ছে নারিকেলবাগান। চর কুকরি-মুকরি থেকে ছোট নৌকা, স্পিড বোট ও ট্রলারে করে ম্যানগ্রোভ বনের ভিতর দিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা চলে যেতে পারবেন নারিকেলবাগান। এখানে আসা পর্যটকরা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্যও দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো থাকলে বিকাল কিংবা সন্ধ্যার দিকে বনের ধারে হরিণের দলের দেখা মিলবে। এ ছাড়াও এখানে আছে প্রচুর শিয়াল। তাড়ুয়ার মতোই সরকারি-বেসরকারিভাবে নারিকেলবাগানেও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে নারিকেলবাগানের দোলনায় বসে নদীর জোয়ার-ভাটা উপভোগ করার দৃশ্য আজীবন মনে রাখার মতো। এখানে আরও আছে ছনের তৈরি বিশ্রাম কেন্দ্র। বন বিভাগের উদ্যোগে এই চরে একটি পাকা ঘাট তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও বসার স্থান। ভাটার সময় নারিকেলবাগানে মাছ ও পোকা-মাকড় খেতে উড়ে আসে বক, সিগালসহ নানা ধরনের পাখি। চরফ্যাশনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে আরেকটি নান্দনিক স্থাপনা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুউচ্চ টাওয়ার ‘জ্যাকব টাওয়ার’। চরফ্যাশন শহরের খাসমহল মসজিদের পাশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও পৌরসভার তত্ত্বাবধানে ১৭ তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন টাওয়ারটি দেখতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভ্রমণের যে আমেজ প্রচলিত আছে চর কুকরি-মুকরিতে আমরা সেই আমেজটাই পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে চাচ্ছি। দেশের সর্ব দক্ষিণে সাগরপাড়ের একটি উপজেলা হওয়ার পরও রাজধানীতে মানুষ যেসব সুযোগ-সুবিধা পান তার সবই পর্যটকদের এখানে দিতে চাচ্ছি। এই এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জোয়ার-ভাটা থেকে রক্ষার জন্য ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেট নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজও প্রায় শেষ। করোনাকালে এখন পর্যটকের আনাগোনা কিছুটা সীমিত হলেও চর কুকরি-মুকরিকে নিয়ে পর্যটকরা ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সর্বশেষ খবর