বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

৪২ শতাংশ দরিদ্রকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জালে আনা হোক

ডা. লেলিন চৌধুরী

৪২ শতাংশ দরিদ্রকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জালে আনা হোক

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশে পৌঁছানো সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জালে আনতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে বললেও, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ বাজেটের মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এই অর্থও ব্যবহারের সক্ষমতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। বেসরকারি হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের এই চেয়ারম্যান বলেন- আমাদের মতো দেশগুলোতে করোনায় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে- জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই দুর্বল। স্বাস্থ্যসেবা বলতে কার্যত কিছু নেই। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাসেবা পৃথক করতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ বিন্যাস দরকার।

তিনি বলেন, দেশে ১১০টি মেডিকেল কলেজ থাকলেও দু-একটা বাদে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এই গবেষণা বাড়ানোর বিষয়টি বাজেটের ওপর বর্তাবে। পাশাপাশি করোনাকালে দারিদ্র্য বেড়ে ২২ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা জালের আওতায় আনতে হবে। এটা না হলে জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। অর্থনীতিও ভোগান্তিতে পড়বে। এটা স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক নীতিতে বিবেচনা করা দরকার। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দরকার। প্রয়োজন স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার।

ডা. লেলিন চৌধুরীর মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে তেমন কোনো চমক ছিল না। যেটুকু হয়েছে, সেটা ক্ষতে মলম লাগানোর মতো। এখন একটা ঘা তৈরি হয়েছে, মলম লাগিয়ে ভালো করলাম। এমন ভাব দেখিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে না। কারণ- করোনাভাইরাস মহামারীতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য খাতে কতটা সংস্কার দরকার। তাই গত বাজেটের ভুলগুলো এবার থাকবে না এমন আশা করছি।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশে যে রোগগুলো বেশি হয়, তা ক্রোনোলজিক্যালি সাজিয়ে সেগুলোর চিকিৎসায় কী ধরনের যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনশক্তি দরকার, সেটা ভেবে বাজেট প্রণয়ন করা হোক। কিন্তু বাজেটের সময় আমরা খোঁজা শুরু করি কী কিনতে হবে, কোনটা কিনলে লাভ বেশি বা বেশি না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই যে ভেঙে পড়েছে, এ ছাড়া অন্যান্য যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো যাতে না হয় তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যে নেওয়া হয় না, সেসব ব্যাপারে তেমন কোনো পরিকল্পনা সেভাবে নেই। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন- ধরুন নিরাপদ খাবার পানি যদি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে ডায়রিয়া কম হবে। বায়ুদূষণ রোধ করলে এর প্রভাবে যে স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়, সেটা মোকাবিলা করা যাবে। অসুখ না হওয়া মানে হাসপাতালে যেতে হবে না। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হওয়া উচিত। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে দেখা হয় না। এমন সংকট উত্তরণে আসছে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলে মানুষ উপকৃত হবে বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর