শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

৫০ বাজেটের ২৩টিই আওয়ামী লীগ সরকারের

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯তম মাইলফলক

রফিকুল ইসলাম রনি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটানা ১৩টি বাজেট ঘোষণা করে দেশের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত অর্ধশত বাজেটের ২৩টিই আওয়ামী লীগ সরকারের। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ১৯তম বাজেটের মাইলফলক স্পর্শ করল। গতকাল জাতীয় সংসদে দেশের ৫০তম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এর আগে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বাজেট সংসদে উপস্থাপনের অনুমতি দিয়ে তাতে সম্মতিসূচক সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর পরই অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংসদ সদস্যরা করতালি ও টেবিল চাপড়ে তাঁদের স্বাগত জানান। পরে ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলাকে লক্ষ্য রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বাজেট সংসদে উত্থাপন করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি জাতির পিতার তুলিতে আঁকা স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে অনকে দূর, বহু দূর, বহু দূর, নিরন্তর।’ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলেছেন, দেশের জনগণ এতবার বাজেট উপস্থাপনের সুযোগ দিয়ে প্রমাণ করেছে তাদের ভাগ্যোন্নয়নে আওয়ামী লীগই তাদের আস্থা এবং বিশ্বাসের ঠিকানা। করোনার সময়ে এবারের বাজেট জনহিতকর এবং সব সেক্টরের মানুষের আশা পূরণ হবে বলেও মনে করেন তারা।

সূত্রমতে, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা তিন দফায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। এর মধ্যে প্রথম দুই মেয়াদে অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি শেখ হাসিনা

সরকারের হয়ে টানা ১০টি বাজেট উপস্থাপন করেন। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম এবং টানা ১৩তম বাজেট গতকাল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো দল এমনটা করতে পারেনি। সূত্রে আরও জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থাপিত সে বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। এরপর ১৯৭৩ ও ’৭৪ সালে দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাজেট পেশ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। ’৭৫ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সরকারের দ্বিতীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. এ আর মল্লিক বাংলাদেশের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করেন, যা ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের শেষ বাজেট। ওই বছরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর টানা ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল।

১৯৮১ সালে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করে দলকে তিনি সুসংগঠিত করায় আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া (১৯৯৭-২০০১) টানা ছয়টি (২৬ থেকে ৩০তম) বাজেট পেশ করেন। এস এ এম এস কিবরিয়ার ২০০১ সালের পেশ করা ৩০তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দশম বাজেট ছিল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য দিয়ে দেশের সব মানুষের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তাসহ একটি বাস্তবভিত্তিক সংকটকালীন সময়োপযোগী বাজেট। এটা ইতিহাসে অনন্য। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে যে ওয়াদা করেছিলেন, এ বাজেট সেই ওয়াদা বাস্তবায়নের অংশ। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ’৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য সহায়তা করবে প্রস্তাবিত এ বাজেট। দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসোপযোগী একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাজেট জাতির কাছে উপস্থাপন করেছেন।

সর্বশেষ খবর