শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

কঙ্কালে খুনের রহস্য

মির্জা মেহেদী তমাল

কঙ্কালে খুনের রহস্য

সকালবেলা রুবেল বাসা থেকে বেরিয়ে যান। জমিতে চাষাবাদ করে রাতে আর বাসায় ফেরেননি। সারা রাত কেটে যায়। পরদিন তার ভাই সামছু বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ করে। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায় না। রুবেলদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার গৌড়ঘাটে। তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর চৌচালা এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতেন। পাশাপাশি সুদের ব্যবসাও করতেন রুবেল। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হালিশহর থানায় একটি জিডি করা হয়। রুবেলের পরিবার চট্টগ্রামে এসে রুবেলের খোঁজ করে। কিন্তু কোথাও রুবেলকে পাওয়া যায় না। ঘটনাটি ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বরের। রুবেলের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ তার কোনো সন্ধান পায়নি। রুবেলের সঙ্গে চট্টগ্রাম বা তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যার প্রতিশোধ হিসেবে রুবেলকে অপহরণ বা গুম করবে। পুলিশ তদন্ত করে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি। রুবেল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি আস্তে আস্তে ধামাচাপা পড়ে যায়। রুবেলের পরিবার থানা পুলিশ করতে গিয়ে হয়রান হয়ে গেছে। পুলিশ বাদেও তারা পীর ফকিরের কাছে ধরনা দেয়। টাকা-পয়সা খরচ করে। কিন্তু কেউ রুবেলের সন্ধান দিতে পারে না। হালিশহর চৌচালা এলাকায় ওয়াসার কাজ হচ্ছিল। শ্রমিকরা মাটি খননের সময় কঙ্কালের মতো কিছু একটা দেখতে পায়। তারা আস্তে আস্তে মাটি খুঁড়ে নিচ থেকে বের করে আনে মানুষের একটি আস্ত কঙ্কাল। হুলস্থুল কান্ড শুরু হয় সেখানে। শ্রমিকদের মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। পুলিশ আসে। তারা কঙ্কালটি জব্দ করে। কঙ্কালটি উদ্ধারের পর চার মাস আগে নিখোঁজ হওয়া রুবেলের বিষয়টি সামনে  চলে আসে। রুবেলের ভাই সামছু এ নিয়ে পুলিশকে জানায়, তার সন্দেহ এটি তার ভাই রুবেলের কঙ্কাল হতে পারে। পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেয়।

পুলিশ রুবেলের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে। সম্পর্ক মিলিয়ে দেখতে সামছুর ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। পরে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে দুজনের ডিএনএ নমুনা মিলে যায়। এই প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার কাছে আসতে লাগে প্রায় এক বছর। পিবিআই এই রুবেল নিখোঁজ ঘটনাটি তদন্ত করতে যেয়ে সোহরাব নামে এক চাষির নাম সামনে আসতে থাকে। পিবিআই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সোহরাবের অবস্থান নিশ্চিত হয়। সোহরাবকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে ৬ মে ভোরে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সোহরাব রুবেলের নিখোঁজ নিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। আদালতেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সোহরাব পিবিআই কর্মকর্তাদের জানান, তার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা থানার পূর্ব সিন্দুর্না গ্রামে। ছয় বছর আগে সপরিবারে চট্টগ্রামের হালিশহর চৌধুরীপাড়ার চৌচালা এলাকায় আসেন। এরপর তিনি সেখানে বিভিন্ন জনের জমিতে বর্গা চাষ শুরু করেন। একই এলাকায় জমি বর্গা চাষ করতেন রুবেলও। সেই সুবাদে দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে।

রুবেল জমি চাষ করার পাশাপাশি সুদে টাকা ধার দিতেন। এক সময় রুবেলের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা সুদে নেন সোহরাব। পরে সোহরাব তার অন্যান্য বন্ধুদের জন্য রুবেলের কাছে থেকে ২৮ হাজার টাকা সুদে নিয়ে দেন। সোহরাবের কাছে এ টাকা একত্রে ফেরত চায় রুবেল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে রুবেল কোদাল দিয়ে সোহরাবের হাত, পা ও পিঠে আঘাত করেন। এ সময় সোহরাবও তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রুবেলের মাথায় আঘাত করে। এতে রুবেল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মারা যান রুবেল। এরপর গর্ত খুঁড়ে রুবেলকে মাটিচাপা দেন সোহরাব। রুবেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে ঘটনার পরে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেন সোহরাব।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর